কচুশাকের যতসব পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতা
কচু শাক আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় শাক। আনাচে-কানাচে, নালা-ডোবা,বসত বাড়ির আশেপাশে, জমির উচু নিচু আইল ছাড়াও বন-জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে এই কচু শাক জন্মে। এইসব জায়গায় কচু শাক পাওয়া যায় বলে কচু শাককে সস্তা মনে করার কোন কারন নেই। কারন কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, লৌহ এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে।
কচু শাকের পাতা এবং ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। আজ আমরা জানবো কচু শাকের যতসব পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা যারা কচু শাক খান কিন্তু কচু শাকের পুষ্টিগুণ উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না তারা আজকের এই পোস্টটি ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কচু শাকের যতসব পুষ্টিগুণ উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
আর পড়ুনঃ আম চাষের পদ্ধতি
আর পড়ুনঃ মাথার চুল পড়ার কারন ও এর প্রতিকার
কচুর বিভিন্ন জাত
আমরা আমাদের আশেপাশের যেসব কচু জন্মাতে দেখি সেগুলোর আবার বিভিন্ন জাত হয়ে থাকে। সাধারণত বনে-জঙ্গলে যেসব কচু আপনা আপনি পাওয়া যায় বা আপনা আপনি জন্মে সেগুলোকে সাধারণত বুনো কচু বলা হয়। এসব কচুগুলো মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। খাওয়া উপযোগী কতগুলো কচুর মধ্যে মুখি কচু, পানি কচু, পঞ্চমুখী কচু, ওল কচু, দুধ কচু, মান কচু এবং শোল কচু উল্লেখযোগ্য।
মুখীকচুঃ কচুর মধ্যে মুখীকচু সুস্বাদু কচু। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এই কচুর চাষ করা হয়। এক এক জায়গায় এই কচু এক এক নামে পরিচিত। যেমনঃ গোরাক কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, বিন্নি কচু ইত্যাদি। এই মুখী কচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ ' এবং লৌহ থাকে।
ওলকচুঃ ওলকচুতে পুষ্টি ও ঔষধি উপাদান উভয়ই পাওয়া যায়। এই ওলকচু মূলত রান্না করে খাওয়া হয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা এই ওল কচু খেতে পারেন। কারণ ওলকচুর যে রস তা ফেরাস উচ্চ রক্তচাপের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের সব জায়গায় এই ওলকচু হয়। তবে চট্টগ্রাম এবং সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে এই কচুর আবাদ হয়।
মানকচুঃ মানকচুর ডগা এবং কচু ও উভয়ই সবজি এবং তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। মানকচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকায় একটি হজমে খুব দ্রুত কাজ করে।
পানিকচুঃ যেসব কচু পানিতে চাষ করা হয় সে কচুগুলোকে পানি কচু বলে।পানি কচু বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন নারিকেল কচু জাত কচু বাস কচু ইত্যাদি। এই পানি কচুকেও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। বিশেষ করে এই পানির কচুর চট্টগ্রাম মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় সবজি। অন্যান্য কচুর তুলনায় এক কচুর স্বাদ এবং পুষ্টি বেশ ভালো।
যেসব কারনে কচু শাক খাওয়া উচিত
মাছ মাংস যেমন আমাদের শরীরকে যেভাবে পুষ্টি যোগান দেয় সে দিক দিয়ে কচুশাক ও কোন অংশে কম না। কচু শাকের যতসব পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতার জন্য নিয়মিত খাওয়া উচিত। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসকরা সব সময়ই সবুজ শাকসবজি, কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কচুশাকের মধ্যে প্রয়োজনীয় যতসব পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা অনেক রয়েছে। সেজন্য কচুশাকের চাহিদা ও অনেক রয়েছে। কচুশাককে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কচুপাতার ভর্তা, কচুর ডাটার ঘাটি বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। চিংড়ি, ইলিশ, ছোট মাছ বা শুটকি মাছ দিয়ে কচুশাকের তরকারি খুবই লোভনীয় এবং জনপ্রিয়।
কচুশাকের মধ্যে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম রয়েছে। আর এই পটাশিয়াম হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়। আমাদের শরীরে যখন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় তখন এই কচুশাক সেই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করে। এই কচুশাকে ভিটামিন এ, বি, এবং সি রয়েছে।
এছাড়া কচুশাকে আয়রন সবচাইতে বেশি রয়েছে। কচুশাক ভিটামিন এ এর খুব ভালো উৎস, রাতকানা রোগ সহ ভিটামিন এ এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দৈন্যদিনের পুষ্টির চাহিদায় কচুশাক অনেক ভূমিকা পালন করে।
কচুশাকের যতসব পুষ্টিগুণ
কচুশাক নির্ভেজাল একটি সবজি। ছোট বড় সবাই কচুশাক খেতে পারে। এই কচুশাকে মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। কচুশাকের মধ্যে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো তুলে ধরা হলোঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকের মধ্যে শর্করা রয়েছে ৬.৮ গ্রাম, প্রোটিন রয়েছে ৩.৯ গ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ থায়ামিন ০.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২, রাইবোফ্লেবিন ০.২৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১২ মিলিগ্রাম, স্নেহভাত চর্বি ১.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২২৭ মিলিগ্রাম এবং খাদ্য শক্তি রয়েছে ৫৬ কিলো ক্যালরি। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই কচুশাকের কি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে। আর এই পুষ্টিগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমাদের একটু বেশি বেশি করে কচুশাক খাওয়া উচিত।
কচুশাকের উপকারিতা
- কচুশাকের সবচাইতে বড় উপকারিতা হলো এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরস রয়েছে। আমাদের হাড়ের গঠনে কচুশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দাঁত এবং হাড়ের ক্ষয় রোধে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। নিয়মিত কচুশাক খেলে দাঁত এবং হাড় খুব ভালো থাকবে।
- কচুশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। আর এই আয়রন আমাদের শরীরের রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। সেজন্য যারা রক্তশূন্যতায় ভুগেন তাদের বেশি বেশি কচুশাক খাওয়া উচিত।
- কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এই ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাদ্য আমাদের হজম খুব দ্রুত করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তারা নিয়মিত এই কচুশাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সহজে মুক্তি পাবেন।
- কচুশাকের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা, চোখে ছানি পড়া, চোখ দিয়ে কম দেখা, চোখে ঝাপসা দেখা সহ আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তিকে আরো বাড়িয়ে দেয়। রাতকানা রোগের জন্য কচুশাকের কোন বিকল্প নেই। কেননা রাতকানা রোগের জন্য কচুশাক খুব দ্রুত কাজ করে।
- এছাড়াও কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এই ভিটামিন সি এর ফলে দেহে লৌহ উপাদানের ঘাটতি সহজে পূরণ করা যায়। এছাড়া ভিটামিন সি আমাদের শরীরে ক্ষত বা কেটে যাওয়ার স্থান দ্রুত ভালো করতে সাহায্য করে। সেজন্য মূলত শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকেই এই কচুশাক খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে তাহলে শরীরের ছোট ছোট পুষ্টি উপাদান গুলো খুব দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে।
- কচুশাকের একটি উপকারিতা হল রক্তের কোলেস্ট্রোলের মাত্রা কমিয়ে আনে।। সেজন্য যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে সেসব রোগীদের বেশি বেশি কচুশাক খাওয়া উচিত। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারে ঝুঁকি কমে।
- বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য কচুশাক অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ এবং অনেক উপকারি একটি খাবার। গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। এ সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। কচুশাক আনাচে-কানাচে সব জায়গায় পাওয়া যায়।
- এছাড়াও আমাদের শরীরের মধ্যে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখার জন্য কচুশাক বিশেষ উপকারিতা পালন করে। এই শাকের মধ্যে যে আয়রন এবং ফোলেট রয়েছে তা আমাদের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এতে শরীরে রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকে। কচুশাকের মধ্যে যে ভিটামিন রয়েছে তা আমাদের রক্তপাত বন্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কচুশাকের অপকারিতা
কচুশাকের সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেমন কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ কচুতে অক্সলেট নামে উপাদান রয়েছে আর এই উপাদানের জন্যই গলা চুলকায়। তবে ভয়ের কারণ নেই কচুশাক রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার এই গলা চুলকানো থেকে রক্ষা পাবেন। আবার অনেক সময় কচুশাকের ভর্তা খাওয়ার সময় লেবুর রস খেলে গলা চুলকানি রোধ হয়।
কচুশাকের আর একটি অপকারিতা হল অ্যালার্জি। যাদের শরীরে এলার্জি রয়েছে তাদের কচএশাক না খাওয়াই ভালো। কচুশাক খেলে অনেক সময় অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আবার যাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা রয়েছে তারা যদি কচু শাক খায় তাহলে আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সর্বশেষ
কচুশাকের যতসব পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
কচুশাকের যতসব পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url