তেঁতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

তেঁতুলের নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। তেতুল পছন্দ করে না এরকম মানুষ খুব কমই আছে। তেতুল শুধুমাত্র ফল হিসেবে না এর বিচিও খাওয়া যায়। এবং তেঁতুলের বিচিতে বিশেষ কিছু গুনাগুন রয়েছে। যেগুলো অনেকে জানেন না। আচার এবং আচার জাতীয় মুখরোচক খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তেতুলের টক এবং খাবারের সাথে মেখে খাওয়ার জন্য তেঁতুলের চাটনির ব্যাপক কদর রয়েছে। আজকে আলোচনার বিষয় তেতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা যারা তেতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না তারা আজকে আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে তেতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নিন তেঁতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।

তেতুলের বিচিতে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে

অন্যান্য ফলের মত তেতুল ও একটি উপকারী গুণসম্পন্ন ফল। তেতুলকে আমরা কাঁচা এবং পাকা উভয় ভাবেই খেয়ে থাকি। কাঁচা তেতুলের বিচি নরম, বেশ তিতা এবং কটু স্বাদ যুক্ত হয়। এবং পাকা তেতুলের বিচি শক্ত হয়। এবং এই শক্ত বিচিকে আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া যায়। তেতুলের বিচিকে আগুনে পুড়িয়ে খেলে এক অন্যরকম স্বাদ পাওয়া যায়। শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয় এই বিচিতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমনঃ
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি
  • ক্যালসিয়াম
  • ফাইবার
  • পটাশিয়াম
  • থায়ামিন
  • রিবোফ্লাভিন 
তেঁতুলে বিচি আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া রক্ত কোলেস্টেরলের মাএা কমাতে এই তেতুলের বিচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তেঁতুলের গুঁড়া বিচির উপকার এবং খাওয়ার নিয়ম

তেঁতুল খাওয়ার পর তেঁতুলের ফলকে আমরা ফেলে দেই। তেঁতুল খাওয়ার মত করে তেতুলের ফলকেও খাওয়া যায়। গুড়া তেঁতুলের বিচিতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তেঁতুলের বিচি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম বা নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তেঁতুলের বিচিকে পুড়িয়ে চিবিয়ে খাওয়া যায়। আবার এগুলোকে গুড়া করে খাওয়া যায় এবং সংরক্ষণও করা যায়।

তেঁতুলে গুড়া বিচি বা তেঁতুলে বিচির চূর্ণ একই কথা। তেঁতুলের বিচির এই পাউডারকে গরম পানিতে গুলিয়ে খেয়ে থাকেন। আবার এই তেঁতুলের বিচির গুঁড়া কে পাউডার বানিয়ে ও খাওয়া যায়। গুঁড়া তেঁতুলের বিচি শরীরে অতিরিক্ত চর্বি দূর করে এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করে। তাহলে জেনে দিন তেঁতুলের গুঁড়া বিচির উপকার।

তেঁতুলের গুঁড়া বিচির উপকার

  • তেঁতুলের গুঁড়া শরীরের দুর্বলটা কাটাতে সাহায্য করে। যাদের শরীর দুর্বল তারা এই তেঁতুলের বিচিকে খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের দুর্বলতা কেটে যাবে এবং আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি, বীর্যের ঘনত্ব এবং বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে তেঁতুলের বিচির গুঁড়া সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখে। সেজন্য যারা যৌন সমস্যায় ভুগেন তারা তেঁতুলের বিচির গুঁড়া সেবন করতে পারে।
  • যদি ঘনঘন স্বপ্নদোষ হয় তাহলে তেঁতুলের বিচির গুঁড়া খান। এতে করে দ্রুত আপনার ঘন ঘন স্বপ্নদোষ ভালো হয়ে যাবে।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুর শক্তিবর্ধন হিসেবে তেঁতুলের বিচির গুঁড়া ভালো কাজ করে। রক্ত ও মূত্রের প্রকোপ নিবারণ ও স্নিগ্ধ কারক হিসেবে ভালো কাজ করে।
  • এছাড়া তেঁতুলের বিচি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে পাশাপাশি রক্তে যে কোলেস্টেরল রয়েছে তার মাত্রা কমিয়ে আনে।
  • এছাড়া নারী ও পুরুষের গোপন সমস্যা, ঘনঘন স্বপ্নদোষ, দ্রুত বীর্যপাত এবং শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ভালো করে।

তেঁতুলের বিচির ব্যবহার

বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে এই তেঁতুলের বিচি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি গত বছর ভারত থেকে প্রায় ৯০ মেট্রিক টন তেঁতুলের বিচি বাংলাদেশ আমদানি করা হয়েছে। তাহলে এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন তেঁতুলের বিচি কতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলের বিচি থেকে কয়েল তৈরি করা হয়। যেটি মশা তাড়াতে সাহায্য করে।

গত কয়েক বছরে যখন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছিল তখন থেকেই কয়েলে তেঁতুলের বিচি ব্যবহার করা হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইউনানি, আয়ুর্বেদ, হোমিও ও অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরিতে তেঁতুলের বিচির ব্যবহার করা হয়। চোখের শুষ্ক রোগের চিকিৎসায় যে ড্রপ ব্যবহার করা হয় সেখানে তেঁতুলের বিচি ব্যবহার করা হয়।


পাকস্থলীর সমস্যা, লিভার এবং গল-ব্লাডারের সক্ষমতা বাড়াতে তেঁতুলের বিচি বেশ কার্যকারী। গর্ভকালীন সময়ে বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, মাথা ঘুরানি ইত্যাদি দেখা দিলে তেঁতুলের শরবত বেশ ভাল কাজ করে। এছাড়াও তেঁতুলের বিচিতে বিভিন্ন জিনিসপত্রকে আকর্ষণীয় এবং চমৎকারভাবে সাজানো যায়। এবং এই তেঁতুলের বিচি থেকে এক ধরনের রং তৈরি করা হয় যেই রং দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই হয়।

তেঁতুলের বিচি দিয়ে মালাও তৈরি করা হয়। তেঁতুলের বিচিকে গরম পানিতে ফুঁটালে এক ধরনের আঠা পাওয়া যায়। যে আঠা ছবি আঁকানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। কাজেই তেঁতুল খাওয়ার পর তেঁতুলের বিচিকে আমরা অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে না দিয়ে এটি সংরক্ষণ করে রাখলে আমাদের নানা কাজে আসবে।

তেঁতুল খেলে যেসব উপকার হয়

তেঁতুল মুখরোচক এবং টক জাতীয় খাবার। অনেকে বলেন যে তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। আবার এটাও শোনা যায় মস্তিষ্কের জন্য নাকি তেঁতুল ক্ষতিকর। আমাদের এসব সম্পূর্ণ ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে আধুনিক ডাক্তাররা তেঁতুলের মধ্যে যেসব উপকারী পুষ্টি পেয়েছেন তা আপনাদের সকলের জানা উচিত। তেঁতুল খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হলঃ
  • হৃদরোগ ভাল হয়।
  • তেঁতুল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • যদি হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে যায় তাহলে তেঁতুল খেলে দ্রুত প্রেসার নেমে আসে।
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
  • শরীরের মেদ কমাতে তেতুল কার্যকরী।
  • তেতুল আমাদের হজমের সাহায্য করে।
  • হাত পা জ্বালাপোড়া করা, পেটের বায়ু বের হওয়ার জন্য তেঁতুল অনেক উপকারী।
  • তেঁতুল গাছের বাকল লাগালে ক্ষত সেরে ওঠে।
  • বুক ধরফর,মাথা ঘোরানো এসবে তেঁতুল খেলে কিছুটা আরাম হয়।
  • আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের সমস্যায় তেঁতুল উপকারি।
  • পাকা তেঁতুল খেলে কাশি ভালো হয়।
  • তেঁতুলেরপাতা রস কৃমিনাশক অসুখ এবং চোখ ওঠা ভালো করে।
  • মুখে ঘা হলে তেঁতুলের পানি দিয়ে কুলি করলে ঘা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
  • তেঁতুল আমাদের মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
  • তেঁতুল ক্যান্সার কোষ কলা কে ধ্বংস করে।
  • তেঁতুল খেলে খিদে বাড়ে এবং বমি বমি ভাব দূর হয়।
  • শিশুদের পেটের কৃমি দূর করে।
  • বাত এবং জয়েন্ট এর ব্যথা দূর করে। 

তেঁতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

তেঁতুল একটি সিজনাল ফল। তেতুল চৈত্র মাসে পাকে। তেঁতুল ধরার শুরু থেকে পাকা পর্যন্ত সব সময়ই এই তেঁতুলের মধ্যে আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফলটি সব সময় টক। তেঁতুল যেমন খাওয়া যায় ঠিক তেমনি এর বিচিও খাওয়া যায়।

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানলেও তেঁতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতের সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না। তাহলে আজ জেনে নিন তেঁতুলের বিচির উপকারিতা এবং অপকারিতা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ যারা দীর্ঘদিন ধরেও কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন নিয়ম করে তেঁতুলের বিচি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কারণ তেঁতুলের বিচিতে ফাইবার পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে তেঁতুলের বিচি খুবই সহায়ক। সঠিক এবং সময়মত চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তী সময়ে পাইলসে্র সমস্যা দেখা দিতে পারে।


ওজন কমায়ঃ অতিরিক্ত চিকন হলেও যেমন দেখতে খারাপ লাগে আবার অতিরিক্ত মোটা হলেও দেখতে খারাপ লাগে। আপনি যদি মোটা থেকে চিকন হতে চান তাহলে প্রতিদিন গরম পানিতে পরিমাণ মতো তেঁতুলের বিচির গুড়া মিশিয়ে খান। তাহলে দেখবেন অতি দ্রুত আপনার শরীরে ওজন কমতে শুরু করেছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস একটি জনবহুল সমস্যা। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আপনি যদি ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে নিয়মিত তেঁতুলের বিচি খাওয়ার অভ্যাস করেন। তেঁতুলের বিচি রক্তে কলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনে। আমাদের শরীরে যখন কলেস্টরলের অভাব হয় তখন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। সেজন্য ডায়াবেটিস হওয়ার আগে থেকে সাবধানে হবে।

অতিরিক্ত স্বপ্নদোষঃ স্বপ্নদোষ হওয়া যেমন আমাদের জন্য উপকারী তেমনি ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হওয়া সমস্যার লক্ষণ। ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তেঁতুলের বিচি খেলে স্বপ্নদোষ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে। এবং আমাদেরশুক্রাণু উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করে।


বীর্যের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ তেঁতুলের বিচির গুড়া খেলে আমাদের বীর্য অনেক গাঢ় হয়। এমন কিছু লোকজন আছে তাদের বীর্যের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা যেন নিয়ম করে সকাল এবং রাত্রে তেঁতুলের বিচির গুড়া খান। তাহলে বীর্যের পরিমাণ বেশি হবে এবং গাড় হবে।

বুক থেকে কফ দূর করাঃ সর্দি, জ্বর একটি স্বাভাবিক বিষয়। সর্দি লাগার ফলে অনেক সময় আমাদের বুকের মধ্যে কফ জমা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এসব কফ আমাদের বুকের মধ্যে ঘরঘরি এবং শ্বাস নিতে নানান সমস্যার সৃষ্টি করে। এরুপ সমস্যা হলে তেঁতুলের বিচি খাওয়া উচিত। যাদের বুকে সবসময় কফ জমে থাকে, একটু কিছু হলেই কাশি হয়, বুক ভারি হয়ে যায় তারা তেঁতুলের বিচির চা খেতে পারেন।

হাই প্রেসার থেকে মুক্তিঃ হাই প্রেসার রোগের তেঁতুল অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। হঠাৎ করে যদি আপনার হাই প্রেসার শুরু হয়ে যায় তাহলে হাতের নাগালে থাকা তেঁতুল বা তেঁতুলের চাটনি খান। এতে করে আপনার হাই প্রেসার কমবে।

সর্বশেষ

তেঁতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

তেঁতুলের বিচি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url