গরম ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন

ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। তিন বেলায় আমরা ভাত খেয়ে থাকি। আমরা বেশিরভাগ সময় গরম ভাত খেয়ে থাকি এই গরম ভাতের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। ভাত আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং আমাদের শরীরের শক্তির মূল উৎস। 
যে ভাত আমাদের শরীরের জন্য এত এত উপকারী সে ভাতের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। আসলেই কি ভাত আমাদের শরীরের শক্তির মূল উৎস???? কোন ধরনের ভাত খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে????
আমাদের আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক। আজ আমরা গরম ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এই পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরব। তাহলে চলুন জেনে নিন গরম ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন গুলো কি কি।

ভাতের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান থাকে

ভাত আমাদের প্রিয় একটা খাবার। অন্যান্য খাবারের মতো ভাতেও অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম চালের সাথে ১৪৩ গ্রাম পানি যুক্ত করলে সর্বমোট ২১৬ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় । এছাড়া ১০০ গ্রাম চালে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে তা হল ৪৪.৭ গ্রাম কার্বোহাইডেট, ৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৬ গ্রাম ফ্যাট, ০.১ গ্রাম ভিটামিন ই, ১.২ গ্রাম ভিটামিন কে, ০.৩ গ্রাম ভিটামিন বি ৬, ছাড়াও ( থায়ামিন, নায়াসিন, ফলেট, কোলাইন বিটাইন, রিবোফ্লেবিন সমানুপাতিক অনুপাতে রয়েছে )। এছাড়া ওমেগা ৩, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড আছে। 
এসব উপাদান ছাড়া ও ক্যালসিয়াম ১৯.৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৮৩.৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৬২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৮৩.৯ মিলিগ্রাম,সোডিয়াম ৯.৮ মিলিগ্রাম, সহ দস্তা, তামা ম্যাগানিজ এবং সেলেনিয়াম কম অনুপাতে রয়েছে। এর সাথে অল্প পরিমানে সোডিয়াম, ম্যাগানিজ আছে।

ভাত খেলে যেসব উপকার হয়

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাত খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। জাপানিদের প্রধান খাদ্য ভাত। এক গবেষণায় দেখা যায় ভাত খেলে আমাদের হৃদরোগের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচাতে ভূমিকা পালন করে।সে কারণে জাপানের হৃদরোগের মৃত্যুর হার অনেকটাই কম। ভাতের গ্লাইসেমিক অর্থাৎ জিআই এর মাত্রা অনেক বেশি।

আমাদের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ ভাত অতি দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ভাতের সাথে নিয়মিত ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে এতে করে ভাতের জিআই এর মানের সাথে এসব সুষম খাবারের জিআই এর মাত্রার ভারসাম্য সমান থাকবে। ভাতের মধ্যে কোন গ্লুটেন থাকে না। সেজন্য যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য ভাত একটি আদর্শ খাবার।


ভাতের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি, ডি, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, আয়রন ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান রয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনারা জেনে হয়তো অবাক হবেন তুষ থেকেও এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তেল তৈরি হয়। আর এই তেল হৃদপিন্ডের বিভিন্ন রক্ষক প্রতিরোধ করে।

ভাতে যেহেতু খারাপ কোলেস্টেরল থাকে না সেজন্য ভাত কোলেস্ট্রোলের স্তর কমাতে সাহায্য করে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো ভাত আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। আমরা আমাদের শরীরের যে পরিমাণ শক্তি পায় তার ৭০ ভাগ শক্তি আসে ভাত থেকে। ভাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে।


কার্বোহাইড্রেট বিভিন্ন বিপাকের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এবং এটি শরীরে রূপান্তরিত হয়ে কার্যকরী ও ব্যবহার উপযোগী শক্তিতে পরিণত করে। এছাড়া ভাতের মধ্যে ফ্যাট, লবণ এবং চিনি অল্প পরিমাণে থাকে। যাদের হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য ভাত একটি ভাল খাবার। কারণ ভাতের মধ্যে সোডিয়াম এর কম থাকে।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয় আমাদের ত্বকের ওপরে যে ব্যথা করে সে ব্যথাকে ভাতের মাড় নিয়ন্ত্রণ করে। বাদামি রং এর ভাতের চালে ফেনোলিক যৌগ থাকে। প্রদাহকারী উপাদান যা আমাদের ত্বকের লাল ভাব এবং যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে।ত্বকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দাগ, বয়সের ছাপ পড়া রোধে ভাতের এন্টিঅক্সিডেন্ট কাজ করে।


তাছাড়া বাদামি রঙের চালের ভাতে উচ্চমাত্রার পুষ্টি উপাদান থাকে, যা নিউরোট্রান্সমিটার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে করে আলঝেইমার্স কে প্রতিহত করে। বাদামি চালের ভাতে ইনডেক্স কম থাকে সে কারনে বাদামী রঙের ভাত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল। এছাড়া এই ভাত আমাদের দৈনন্দিন ম্যাগানিদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।

কোন চালের ভাত খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকর

আমরা বিভিন্ন চালের ভাত খায়। মোটা, চিকন, গন্ধযুক্ত সব ধরনের চাল বাজারে পাওয়া যায়। এসব চালের মধ্যেও কিছু কিছু চাল আছে যেগুলো বিভিন্নভাবে মেশিনের মাধ্যমে প্রসেস করে বিভিন্ন নামে বাজারজাত করে। এরমধ্যে মিনিকেট নামের চাল বেশ জনপ্রিয়। আমরা অনেকেই জানিনা এই মিনিকেট চালটা কিভাবে আসে।

মিনিকেট নামে বাজারে কোন চাল নেই। মূলত মোটা চাল কে মেশিনের মাধ্যমে কেটে চিকন করে সে চালকে মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করা হয়। মিনিকেট নামের চালে পুষ্টি উপাদান থাকে না। মিনিকেট চালকে মেশিনের মাধ্যমে ছেটে চিকন করার কারণে এই চালের সব পুষ্টি গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়াও বাজারে তৈরি সাদা এবং চিকন চাল পাওয়া যায় যে চালগুলো দীর্ঘদিন ধরে খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। শুধু ক্যান্সারই না হৃদরোগ, ডায়াবেটিস রোগের সম্ভবনাও বাড়ায়।

গরম ভাতের উপকারিতা

গরম ভাত খেলে আমাদের শরীরের দ্রুত শক্তি সঞ্চয় হয়। এছাড়াও গরম ভাতের বিভিন্ন উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। গরম ভাত খেলে হজম ভালো হয়। পেটের বিভিন্ন অন্তেষ্টিক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পেটের গ্যাস দূর হয়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়। হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

সর্বশেষ 

গরম ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

গরম ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url