গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম
দিন দিন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যাবহার বেড়েই চলেছে। একদিকে জ্বালানি কাঠের সংকট, অন্যদিকে হাড়ি-পাতিলে কালি, রান্না করার সময় ধোঁয়া এসবের কারনে মানুষ গ্যাসের চুলা বেশি ব্যবহার করছে। জ্বালানি কাঠের ওপর মানুষ এখন কম নির্ভর হচ্ছে।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা যেমন সহজ। তেমনি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়মকানুম সম্পর্কে আজ আলোচনা করবো। আপনি যদি নতুন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম জানা উচিত।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম
গ্যাস হল এক ধরনের তরল পদার্থ। জ্বালানি কাঠের চাইতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সুবিধা হওয়ায় দিন দিন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। শহর অঞ্চলের মতো গ্রামেও এখন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দেখা যায়।
গ্যাস সিলিন্ডারে শহর, নগর, শিল্প কারখানা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আরো বিভিন্ন কাজে সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। দিন দিন গ্যাস সিলিন্ডারে যেমন চাহিদা বেড়ে চলেছে তেমনি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম না জানার কারনে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে।
গ্যাস ব্যবহারের সময় অসতর্কতা এবং অসাধারণতা, সিলিন্ডার লিকেজ, দুর্বল রেগুলেটর, গ্যাস পাইপ লিকের, গ্যাস সিলিন্ডারের বোতলের সাথে রেগুলেটর এর ভালো মতো সংযোগ,ভাল্ভ নষ্ট ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
আর পড়ুনঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায়
গ্যাস তরল পদার্থ হওয়ায় বিস্ফোরণের সাথে সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাস সিলিন্ডার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। ভালো মানের রেগুলেটর, গ্যাস পাইপ, ভালো মানের বোতল, রেগুলেটরের সাথে গ্যাস সিলিন্ডারে ভালোমতো সংযোগ করতে হবে। এছাড়া যদি গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় তাহলে সতর্কতার সাথে ছিদ্র চিহ্নিত করতে হবে।
কোন গ্যাস ভাল- জেনে নিন
আমরা বাজারে বেশ কয়েক রকমের গ্যাস সিলিন্ডার দেখতে পাই। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি সব মিলে মোট ৩০ টি কোম্পানির প্রায় ২ কোটির মতো গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে এলপিজি সিলিন্ডার অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় অনেক নিরাপদ।
কারণ এলপিজি গ্যাস যে চাপ তৈরি করে, তার চাইতে চার গুণ বেশি চাপ ধারণ করার ক্ষমতা এসব সিলিন্ডারের থাকে। তাই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো ঝুঁকিই নেই। সিলিন্ডার লিকেজ এবং গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম না জানার কারনে গ্যাসের দুর্ঘটনা ঘটে।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সতর্কতা
গ্যাস হচ্ছে তরলকৃত পেট্রোলিয়াম পদার্থ। গ্যাস কে যখন অধিক চাপে বোতল বন্দি করা হয় তখন সে গ্যাসগুলো তরল আকার ধারণ করে। এবং এই গ্যাস যখন আবার রান্নার কাজে বা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় তখন সেটি বায়বীয় বা গ্যাসীয় আকারে বের হয়।
কাজেই এই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য ভাল মানের বোতল সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হবে। হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভাল্ভ ইত্যাদিতে দুর্বলতার কারণে যে কোনো সময় গ্যাস লিক হতে পারে। যখন লিকেজ হয় তখন গ্যাস ধীরে ধীরে বেরিয়ে জমতে থাকে।
সামান্য আগুন এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। সে জন্য হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভাল্ভ ইত্যাদি ভাল মতো চেক করতে হবে। একটি সিলিন্ডারে মেয়াদ সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর হয়। সেজন্য সিলিন্ডারের গায়ের মেয়াদ নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
সিলিন্ডারের উপরের দিকে এ,বি,সি,ডি এই চারটি ইংরেজি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রতিটি বর্ণ আলাদা আলাদা মাসের নাম বোঝায়। এছাড়া কোম্পানির সিল, সেফটি ক্যাপ পাইপ রাবারের রিং রেগুলেটর সঠিকভাবে আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
বর্তমানে বাজারে ভালো এবং খারাপ দুই ধরনের যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। অনেক সময় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারে দুর্ঘটনা ঘটে। নিজের সংযোগ দিতে না পারলে দক্ষ লোকের সাহায্যে রেগুলেটর লাগিয়ে নিতে হবে। সিলিন্ডার ধাক্কাধাক্কি করা এবং মাটিতে গড়ানো যাবে না।
সিলিন্ডার সব সময় সোজা ভাবে রাখতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাসকে বদ্ধ অবস্থায় রাখা যাবে না। সিলিন্ডার কে সবসময় খোলামেলা জায়গায় সোজা করে রাখতে হবে। গ্যাসকে বিদ্যুৎ, দাহ্য পদার্থ, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং অন্যান্য সিলিন্ডার থেকে এলপিজি সিলিন্ডার কে দূরে রাখতে হবে।
সিলিন্ডারের উপর বসা এবং অন্যান্য ভারি কোন কিছু রাখা যাবে না। সিলিন্ডারের আশেপাশে আগুন জালানো এবং ধূমপান করা যাবে না। রান্না করার সময় ঘরের জানালা দরজা খোলা রাখতে হবে। যদি সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে ঘরের ভিতরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় তাহলে ভুলক্রমেও মোমবাতি, ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক সুইচ দেয়া যাবে না। তাহলে মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোর হয়ে যাবে। এছাড়া
গ্যাস সিলিন্ডারকে নিরাপদ ভাবে মজুদ, সরবরাহ, এবং ব্যবহার করতে হবে।
- জম ধরা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করার চেষ্টা করা।
- চুলা কে গ্যাস সিলিন্ডারের উপরে এবং চুলা হতে গ্যাস সিলিন্ডার ২-৩ ফিট দূরে রাখা।
- চুলার আশেপাশে লাইটার, মোমবাতি, কয়েল জ্বালিয়ে না রাখা।
- ভাল মানের রেগুলেটর এবং ভাল গ্যাস পাইপ ব্যবহার করা।
- রেগুলেটর ভাল মতো আটকানো।
- ভাল মানের চুলা ব্যবহার করা।
- আগুন হতে দূরে গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণ করা।
- রান্না করা অবস্থায় গ্যাস সিলিন্দারকে নারাচারা করা যাবে না।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url