হিট স্ট্রোক কখন এবং কেন হয়

স্টোক শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত হলেও হিট স্ট্রোক শব্দটি আমাদের কাছে এতটা বেশি পরিচিত না। সারাদেশে যে পরিমাণ তাপদাহ চলছে তাতে করে হিট স্টোকের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। মূলত অত্যাধিক গরমের কারণে হিট স্টোকে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

হিট স্ট্রোক কখন এবং কেন হয় এটা বলা যায় না। যে কোন সময় হিট স্টোক হতে পারে। এই গরমের হাত থেকে বাঁচতে এবং হিট স্টোকের হাত থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনিও হিট স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তাহলে চলুন জেনে নিন হিট স্টোক কখন এবং কেন হয়।

আর পড়ুনঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায়

হিট স্টোক কি

হিট স্টোক হচ্ছে এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার মানে হচ্ছে অধিক মাত্রা এবং থার্মিয়া মানে হচ্ছে তাপ। অর্থাৎ হাইপারথার্মিয়া মানে হচ্ছে শরীরের অত্যাধিক তাপ। শরীরের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি বেড়ে যায় অথবা শরীরে যখন হঠাৎ করে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় তখন এই ঘটনাকে বলা হয় হিট স্টোক।

আমাদের শরীরের ভিতরে রক্ত চলাচল, শ্বাস-প্রশ্বাস,বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন, এবং রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে আমাদের শরীরে সবসময় একটা তাপমাত্রা বিরাজ করে। এবং আমাদের শরীর ঘামার সময় সেই গরম তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।


কিন্তু যদি আমরা একটানা গরমের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম করি বা রোদের মধ্যে থাকি তাহলে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশনের সৃষ্টি হয়। শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার কারনে শরীর ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।

শরীর ক্লান্ত এবং দুর্বল হওয়ার কারণে যেকোনো সময় মাথা ঘোরানি দিতে পারে। অনেকে আবার অজ্ঞান ও হয়ে যেতে পারেন। আর এই অজ্ঞান হওয়াকেই বলা হয় হিট স্টোক। তৎক্ষণাৎ যদি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে যেকোনো সময় মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন হিট স্টোক কখন এবং কেন হয়। হিট স্টোকে বাচ্চা, বয়স্ক এবং যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা খুব সহজ আক্রান্ত হতে পারে।

হিট স্টোকের লক্ষনগুলো কি কি

যখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখন শরীরের ভিতরে নানা রকম প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। কখনো জ্বর আসে,কখনো সর্দি লাগে, কখনো মাথা ঘুরানি, কখনো শরীর দুর্বল ইত্যাদি নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়।
হিট স্ট্রোক কখন এবং কেন হয় এই বিষয়ে জানলেও হিট স্টোকের লক্ষনগুলো কি কি তা বুঝতে পারি না। প্রাথমিক ভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক বা হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্প হলে শরীরের মাংসপেশিতে টান এবং ব্যথা লাগে।


এরপর শরীর দুর্বল হয় এবং হঠাৎ প্রচন্ড পিপাসা পায়। হিট স্ট্রোকের আগে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যদি এসব লক্ষণ আমাদের শরীরের মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের হিট স্ট্রোক হয়েছে। হিট স্টোকের লক্ষন গুলো হলঃ
  • হঠাৎ করেই দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথা ব্যাথা, শরীর ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব হওয়া, বুক ধরফর করে।
  • শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।
  • শরীর ঘামা বন্ধ হয়ে যায়।
  • ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
  • চোখে সব কিছু ঝাপসা লাগে।
  • নারী স্পন্দন দ্রুত হয়।
  • রক্তচাপ কমে যায়।
  • হ্যালোসিনেশন এবং অসংলগ্নতা হতে পারে।
  • প্রসবের চাপ এবং পরিমাণ কমে যায়।
  • হঠাৎ শরীর খিঁচিয়ে উঠতে পারে।
  • শরীরের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে পারে।
  • এমনকি রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

কাদের হিট স্ট্রোক বেশি হয়

গরমের মধ্যে শরীর তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেকোনো সময় হিট স্ট্রোক হতে পারে। যেকোনো বয়সের মানুষ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কম থাকে।

ফলে শিশু এবং বৃদ্ধদের যে কোন সময় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া যারা প্রায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, বেশি বেশি ওষুধ সেবন করেন, সেসব ব্যক্তিদের হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। দিনের বেলা অত্যাধিক পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।


বিশেষ করে যারা শ্রমিক, রিক্সাচালক, কৃষক এদের দিনের বেলা অত্যাধিক পরিশ্রমের কারনে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া যদি শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয় তখন ও হিট স্ট্রোকের সম্ভবনা থাকে।

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

হিট স্ট্রোক একজন সুস্থ মানুষের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে কোন সময় একজন সুস্থ, সবল, ভালো মানুষ হিট স্টোকে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু সতর্কতা মেনে চললে এই গরমের দিনে হিট স্টোকের হাত থেকে বেঁচে থাকা যায়। যেমনঃ
  • বেশি বেশি পানি পান করা।
  • প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া।
  • বাইরের কোথাও বের হলে সঙ্গে অবশ্যই একটি পানির বোতল, সাথে ছাতা, ক্যাপ, টুপি মাথায় দিয়ে বের হন। সঙ্গে পানির বোতল থাকলে আপনি যে কোন জায়গায় গিয়ে পানি খেতে পারবেন।
  • সব সময় নরম ঢিলেঢালা, হালকা পোশাক পরিধান করা। ব্যবহৃত কাপড় সুতির বা সাদা অথবা হালকা রঙের ব্যবহার করুন।
  • যারা সবসময় রোদের মধ্যে কাজ করেন তারা মাথার উপরে ছাতা বা কাপড় ব্যবহার করুন।
  • স্যালাইন ,ডাবের পানি, আখের রস ইত্যাদি পান করুন। কারণ ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ এবং পানি বেরিয়ে যায়। প্রয়োজনে ফলের রস ও রাখতে পারেন।
  • দুধ চা কফি ইত্যাদি কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। গরমে এমনিতেই আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে এর মধ্যে যদি গরম দুধ, চা, কফি খাওয়া যায় তাহলে শরীরের তাপমাত্রা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
  • একটানা কাজ না করে মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে কাজ করুন।
  • সব সময় ছায়াযুক্ত শীতল জায়গায় বসার চেষ্টা করুন।

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে করণীয় কি

প্রাথমিকভাবে যদি হিট স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি কোন ব্যক্তি বুঝতে পারেন তিনি হিট স্ট্রোক করেছেন তাহলে তিনি নিজে তৎক্ষণাৎ যা করতে পারেন তা হল-
  • ছায়াযুক্ত শীতল এবং আরামদায়ক জায়গায় বসে পড়ুন, বাতাস করুন। যদি সম্ভব হয় ফ্যান বা এসির নিচে বসুন।
  • শরীরের কাপড় চোপড় খুলে শরীরকে উন্মুক্ত করে দিন।
  • শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে ফেলুন। প্রয়োজনে গোসল ও করতে পারেন।
  • প্রচুর পরিমাণ পানি এবং স্যালাইন পানি খান। ডাব ,ফলের জুস ও খেতে পারেন।

আর যদি কোন ব্যাক্তি হিট ষ্টোক করে ফেলে তাহলে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। হাসপাতালে নেওয়ার আগে যদি সুযোগ থাকে তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসা করে নিন। এক্ষেত্রে যেভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন তা হলঃ
  • অতি দ্রুত শীতল এবং ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যান।
  • শরীর থেকে কাপড়চোপড় কিছুটা খুলে ফেলুন।
  • শরীর পানিতে ভিজিয়ে নিন। প্রয়োজনে একটা কাপড় ভিজিয়ে সারা শরীরে পেচিয়ে দিন।
  • কাঁধে, বগলে, পায়ের তালুতে বরফ দিন।
  • যদি পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে না যায় তাহলে তাকে ডাবের পানি স্যালাইন পানি এবং ঠান্ডা পানি খাওয়ান।
  • একটু পর পর শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক মতো চলছে কিনা হৃদ স্পন্দন ঠিকমতো চলছে কিনা তা বারবার দেখতে হয়। প্রয়োজন হলে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বুকে চাপ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে।
  • যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

যেহেতু হিট স্ট্রোক যেকোনো সময় হতে পারে সেজন্য আমাদেরকে গরম থেকে সচেতন হওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য
হিট স্ট্রোক কখন এবং কেন হয় এটি পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

হিট স্ট্রোক কখন এবং কেন হয় এটি পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url