বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয়
আমরা সবাই জানি বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় । বজ্রপাত হল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যা আকাশের সমতলে, ভূমিতে ঘটে থাকে। মেঘের ইলেক্ট্রোস্টেটিক চার্জ এবং মাটির মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক চার্জের মধ্যে শক্তির সঞ্চলনের পথে বজ্রপাত সংঘটিত হয়।
বজ্রপাতের কারনে অনেক মানুষ মারা যায়। গাছ পালা, পশুপাখি, ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক সময় মানুষ বধির হয়ে যায়। বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় এই বিষয় নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। তাহলে জেনে নিন বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় ।
বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ কেন চমকায়
আকাশে যখন বিদ্যুৎ চমকায় আমরা তখন বুঝতে পারি বজ্রপাত হতে পারে। বজ্রপাত হওয়ার জন্য প্রথমে বিদ্যুৎ চমকায়। আবার অনেক সময় বিদ্যুৎ নাও চমকাতে পারে। মেঘে মেঘে যখন ঘর্ষণ হয় তখন ঘর্ষণের ফলে তাপ এবং বিজলি উৎপন্ন হয়।
এই বিজলী শব্দের চাইতে তড়িৎ গতিতে এবং শব্দের চাইতে আগে আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়। বজ্রপাতের সময় বাতাসের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী। কিন্তু মেঘে জমা হওয়া স্থির বিদ্যুৎ এত উচ্চ বিভব শক্তি সম্পন্ন হয় সেখানে প্রায় ১০ মিলিয়ন ভোল্ট পর্যন্ত উৎপন্ন হতে পারে।
এবং সেটি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার জন্য বাতাসের সরু একটা চ্যানেলকে আয়নিত করে সেখানে পরিবাহী পথ সৃষ্টি করে। এবং আয়নিত পরমাণু থেকে বিভিন্ন শক্তি তীব্র আলো ছটা তৈরি করে। আর এ কারণে বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ চমকায়।
আর পড়ুনঃ বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায়
বজ্রপাতের সময় শব্দ কেন উৎপন্ন হয়
বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় জানেন??? মেঘে মেঘে যখন ঘর্ষণ লাগে তখন ডিসচার্জ হওয়ার সময় বাতাসের মধ্যে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় এয়ার ব্যাকডাউন। মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বাতাসের যে চ্যানেলের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সেই প্রবাহিত বিদ্যুতের তাপমাত্রা প্রায় ২৭০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
যা সূর্যের তাপমাত্রা থেকেও বেশি। আর এই তাপমাত্রা বাতাসের স্বাভাবিক তাপ থেকে ১০ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর এই তাপমাত্রা এবং চাপ মাত্র ১ ন্যানো সেকেন্ডে ও কম সময় লাগে একটি পৌঁছাতে।
হঠাৎ করে এত কম সময় তাপমাত্রা এবং চাপের এত ব্যাপক পরিবর্তন হয় যে চারপাশের বায়ুমণ্ডল কে প্রচন্ড গতিতে বিস্ফোরণ বা সম্প্রসারিত করে। আর ঠিক এই সময় যে শব্দটি উৎপন্ন হয় সেটি আমরা শুনতে পাই। আর এর কারণে বজ্রপাতের সময় শব্দ উৎপন্ন হয়।
বজ্রপাতের সময় কি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়
বজ্রপাতের সময় শুধুমাত্র কি বিজলি চমকায়?? নাকি আরো কোন শক্তি উৎপন্ন হয়। বজ্রপাতের সময় যেমন বিকট জোরে আজ হয়, বিদ্যুৎ চমকায়, ঠিক সেরকম ভাবে বজ্রপাতের সময় বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। যদি ভূমি থেকে ৩ মাইল দূরত্বে বজ্রপাত হয় তাহলে সে বজ্রপাত থেকে গড়ে ১ বিলিয়ন বা ১০ বিলিয়ন শক্তি উৎপন্ন হয়।
আমরা বাসা বাড়িতে যে ১০০ ওয়ার্ডের বাল্ব ব্যবহার করি সেটা এক সেকেন্ড জ্বালাতে ১০০ জুল শক্তি খরচ হয়। সে হিসাব অনুসারে ১০ বিলিয়ন জুল দিয়ে ওই বাল্বকে ৩৯ মাস অর্থাৎ ১,১৬০ দিন অবিরাম জ্বালানো যাবে। আর যদি এই শক্তিকে কিলোওয়াট আওয়ারে হিসাব করি তাহলে ২৭,৮৪০ কিলোওয়াট আওয়ারে দাঁড়ায়।
আর যদি এটাকে আরো সহজ ভাবে হিসাব করি তাহলে বাংলাদেশে একটি পরিবার গড়ে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ১৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আর বজ্রপাতের সময় যে ১০ বিলিয়ন শক্তি উৎপন্ন হয় তা যদি জমা করে রাখা হয় তাহলে ওই পরিবারটি ১৫ বছর বা ১৮৫ মাস বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।
বজ্রপাতের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় মাত্র ১ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে। যদি ভূমি থেকে ৩ মাইল দূরত্বে বজ্রপাতে এত পরিমাণ শক্তি থাকে তাহলে এর চাইতে বেশি মাইল দূরত্বে এবং বজ্রপাত যদি আরো বেশি সময় স্থায়ী হয় তাহলে সেখান থেকে কি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তা একবার ভেবে দেখুন।
বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় এবং আপনি যদি চান তাহলে বজ্রপাতকে ট্রাম্পে ফেলে বিনা পয়সার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বজ্রপাতকে ট্রাম্পে ফেলতে এক সেকেন্ডের ও কম সময়ের মধ্যে করতে হবে। কারণ বজ্রপাত স্থায়ী হয় এক সেকেন্ডের মত।
আর বজ্রপাত থেকে কিভাবে এই বিপুল পরিমাণ তড়িৎ শক্তি ধারণ করা যায় বা সংরক্ষণ করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায় সে লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এবং গবেষণা করছেন। বজ্রপাতের সময় যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় সে পরিমাণ শক্তি যদি সংরক্ষণ করা যায় তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভালো ভাবে করা যাবে।
আর পড়ুনঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায়
বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয়
বজ্রপাতের অর্থ হল মহাকাশ থেকে ভূমিতে বিদ্যুৎ পতিত হওয়া। ভূপৃষ্ঠের পানি গুলো যখন জলীয় বাষ্প হয়ে ছোট ছোট কণা হয়ে মেঘে পরিণত হয় তখন এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে স্থির বৈদ্যুতিক চার্জ জমা হয়। পানি চক্রে পানির কোনগুলো যখন ক্রমশ ঊর্ধ্ব আকাশে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচে থেকে বেশি ঘনীভূত বা বৃষ্টি বা তুষার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এর কারণে বৃষ্টির কণা যখন বাষ্প হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন বাষ্প পরমাণু কিছু ইলেকট্রন হারায়। এখন আমরা জানব বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় । যখন কোন পরমাণু ইলেকট্রন হারায় বা ত্যাগ করে তখন তাকে আমরা পজেটিভ (+) ইলেকট্রন বলি।
আবার যখন কোন পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে তখন তাকে আমরা নেগেটিভ (-) ইলেকট্রন বলি। হালকা পজেটিভ (+) চার্জযুক্ত ইলেকট্রন গুলো থাকে মেঘের উপরে পৃষ্ঠে। আর ভারী অর্থাৎ নেগেটিভ (-) চার্জ থাকে নিচের দিকে। পজিটিভ (+) এবং নেগেটিভ (-) চার্জ গুলো জমা হওয়ার পর একে অপরকে পরস্পর আকর্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এই আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ ৩ ভাবে হতে পারে। যেমনঃ
- মেঘের মধ্যে পজিটিভ (+) এবং নেগেটিভ (-) চার্জের মধ্যে।
- একটি মেঘের পজেটিভ (+) বা নেগেটিভ (-) চার্জের সাথে অন্য আরেকটি মেঘের পজিটিভ (+) বা নেগেটিভ (-) চার্জের সাথে।
- মেঘের পজেটিভ (+) চার্জের সাথে ভূমির পজেটিভ (+) চার্জ।
বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় তা এতক্ষণে আপনারা জেনে গিয়েছেন। মেঘের পজেটিভ চার্জের সাথে ভূমির নেগেটিভ চার্জ মেঘ থেকে ভূমিতে বজ্রপাতে সময় পজিটিভ চার্জ থেকে নেগেটিভ চার্জের দিকে বিদ্যুৎ বাতাসের মধ্যে প্রবাহিত হয়। আর এই ঘটনাকে বলা হয় বজ্রপাত।
কিছু কিছু বজ্রপাত হয় যেগুলোতে ভূমিতে বিদ্যুৎ বা কোন চার্জ পতিত হয় না। শুধুমাত্র (CG discharging) প্রক্রিয়া যেসব বজ্রপাত উৎপন্ন হয় সেগুলো শুধুমাত্র মাটিতে পতিত হয়। আর এভাবেই বজ্রপাত হয়।
লেখকের মন্তব্য
বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় এটি পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয় এটি পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url