বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায়

বাংলাদেশে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বজ্রপাত একটি অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে বজ্রপাত মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এপ্রিল এবং মে মাসে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আজ আমরা আলোচনা করব বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় সম্পর্কে।
সাম্প্রতি সময় বাংলাদেশে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে এবং বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জনের মত মানুষ মারা যায় বজ্রপাতের কারনে। বজ্রপাতে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হাওর, বিলে, পথে, ঘাটে এবং প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে।


বজ্রপাতে শুধু মানুষই না জীবজন্তু, পশুপাখি এবং অনেক গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মারা যায়। এতকিছু ক্ষয়ক্ষতির দিক বিচার বিশ্লেষণ করে বজ্রপাতকে একটি জাতীয় প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে পুরো বিষয়টা ভালোভাবে পড়তে হবে। একটু ভালোমতো পরলে বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় গুলো হলো

  • যখন বজ্রপাত হবে তখন সেটুকু সময় ঘরের মধ্যে অবস্থান করুন। বজ্রপাত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত ঝড় বৃষ্টি বেশি হয়। এটার মধ্যে বজ্রপাত হওয়ার সবচেয়ে বেশি থাকে। মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে মূলত বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
  • যদি আকাশে মেঘ করে বা বিজলী চমকায় তাহলে বাইরে বের হবেন না। আর যদি বের হয়ে থাকেন তাহলে প্রয়োজন শেষ করে অতি দ্রুত ঘরে ফেরার চেষ্টা করুন। তাছাড়া যেটুকু সময় বাইরে থাকবেন সেটুকু সময় জুতা পরে বাইরে বের হন।
  • বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় এর মধ্যে এটি একটি উপায়। বজ্রপাতের সময় খেলার মাঠ, ঘাট, খোলা জায়গা, উঁচু রাস্তা, বড় কোন গাছপালা, বড় ধরনের বিল্ডিং এর নিচে থাকবে না। তাহলে যেকোনো সময় বজ্রপাতের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
  • বজ্রপাতের সময় যদি আপনি মাঠে, ঘাটে, খেলার মাঠে, খোলা মাঠে বা মাঠের বাহিরে কোথাও অবস্থান করেন তাহলে কানের ভিতরে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন। পায়ের নিচে স্যান্ডেল রাখুন।
  • যত দ্রুত সম্ভব দালান বা ছাওনির নিচে আশ্রয় নিন। আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে টিনের চালাযুক্ত ঘর বা জায়গা অথবা ছাউনি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
  • উচু উচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব তার, মোবাইলের টাওয়ার এসব থেকে দূরে থাকুন।
  • আকাশে যদি কালো মেঘ দেখা যায় তাহলে নদী,পুকুর, ডোবা, খাল, বিল এসব থেকে এবং দূরে থাকুন। 
  • বজ্রপাতের সময় পানিতে নামবেন না।
  • বজ্রপাতের আগে বাসার সকল বৈদ্যুতিক লাইন খুলে ফেলুন। টিভি, ফ্যান, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, এসি, মোটরের সুইচ, টেলিভিশন, ল্যান্ড ফোন, মোবাইল ফোন এসব বৈদ্যুতিক লাইন থেকে খুলে ফেলুন।
  • বজ্রপাতের সময় লোহার জিনিসপত্র বা হাতল যুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। বিকল্প হিসেবে কাঠ এবং প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করুন।
  • বজ্রপাতের সময় টিন বা লোহার চালাযুক্ত কোন জায়গায় আশ্রয় নেবেন না।
  • বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন কানে ধরে রাখবেন না।
  • বজ্রপাতের সময় কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনবেন না। কান থাকে হেডফোন খুলে ফেলুন।
  • বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না। নৌকায় মাছ ধরার সময় যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে মাছ ধরা বাদ দিয়ে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
  • মাঠে কাজ করার সময় যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে কাজ বাদ দিয়ে হাঁটুর মধ্যে মাথা গুজে দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকুন। বা শুয়ে পড়ুন।
  • বজ্রপাতের সময় বড় কোনো গাছপালার নিচে অবস্থান করবেন না।
  • বজ্রপাতের সময় মাঠে বা খেলাধুলার জন্য ছাদের উপরে যাবেন না।
  • বজ্রপাত এবং ঝড়ের সময় লোহার পাইপ, সিড়ির রেলিং এসব স্পর্শ করবেন না।
  • বিল্ডিং করার সময় বিল্ডিয়ের উপরে বজ্রপাত নিরোধক দন্ড অবশ্যই স্থাপন করবেন। বিল্ডিং এর উপরে বজ্রপাত নিরোধক স্ট্যান্ড স্থাপন করলে বজ্রপাতের তাৎক্ষণিক আকর্ষণ স্ট্যান্ডের মাধ্যমে মাটির নিচে চলে যায়। এতে করে দুর্ঘটনা কম ঘটে।
  • বজ্রপাতের সময় খোলামেলা জায়গায় দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করুন। প্রয়োজনে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
  • বজ্রপাতের সময় কাঠ বা প্লাস্টিকের বস্তুর উপর অবস্থান করার চেষ্টা করুন।
  • কেউ বজ্রপাতে আহত হলে তাদের তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মত করে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করুন।  যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস সচল রাখার জন্য বুকে এবং পিঠে হালকা করে চাপ দিতে থাকুন। এবং মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস সচল করার চেষ্টা করুন।
  • বজ্রপাতের সময় যদি কোন যানবাহনে অবস্থান করেন তাহলে সে যানবাহন থেকে দ্রুত নেমে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় চলে যান। 

বৃষ্টির সময় সবচাইতে বড় ভীতিকর অবস্থা হল বজ্রপাত। কারণ বজ্রপাত যেকোনো সময় ঘটতে পারে। বজ্রপাতের কোনো আগাম পূর্বাভাস থাকে না। আকাশে যখন ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয় অথবা বৃষ্টি নাও হতে পারে ঠিক এরকম সময় বজ্রপাত হয়। এই বজ্রপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর এই বজ্রপাতে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা সহ বিপুল সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি মুহূর্তের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজেই বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় এর জন্য নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য চেষ্টা সচেতন হতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায় পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url