তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা

তরমুজ চিনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কম বেশি সবাই তরমুজ পছন্দ করে। কিন্তু তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানে কয়জন। বর্তমানে তরমুজের ভরপুর মৌসুম চলছে। তরমুজ গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও একে সারাবছর পাওয়া যায়।

তরমুজ তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি আমাদের পুষ্টির চাহিদা ও পূরণ করে। তরমুজ শক্ত এবং মোটা আবরনে আবৃত লাল রসালো একটা ফল। তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা ২ টিই রয়েছে। আপনি যদি তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে না জানেন তাহলে আজকে জেনে নিন।

তরমুজের পুষ্টিগুণ সমূহ

তরমুজ মুলত পানিও ফল। তরমুজের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগই পানি থাকে। তরমুজের মধ্যে ৭.৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট এবং তরমুজের আকার অনুসারে চিনি ৬ থেকে ১০০ গ্রাম থাকে। এবং অন্যান্য ২ভাগ উপাদান রয়েছে। তরমুজে ১০০ গ্রাম ক্যালরির মধ্যে মাত্র 30 কিলো ক্যালরি থাকে।

এছাড়া তরমুজের মধ্যে ভিটামিন “এ” যেটা বিটাক্যারোটিন হিসেবে থাকে। ভিটামিন বি৬ এর মত উপকারী ভিটামিন ও তরমুজে পাওয়া যায়। এছাড়া ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ, মিনারেল, এমাইনো এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত নানা উপাদান থাকে।


তরমুজ আমাদের শরীরের পানির সল্পতা পূরণ করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরাও তরমুজ খেতে পারেন। কারণ তরমুজে চিনির পরিমান কম থাকে। তরমুজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় উপকারী ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া তরমুজের পুষ্টিগুণ অনেক রয়েছে।

আমাদের শরীরকে নানা ভাবে সুস্থ রাখতে এটি সাহায্য করে। এজন্য তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা জেনে তারপর তরমুজ খেতে হবে।

তরমুজের উপকারিতা

নিঃসন্দেহে বলা যায় তরমুজ পুষ্টিগুনে এবং রসে ভরপুর। তরমুজ শুধুমাত্র খেতে সুস্বাদু নয়, শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। এতে কোন ধরনের চর্বি নেই। যারা ওজন কমাতে চান, তারা তরমুজ খেতে পারেন। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কেঃ
  • তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমানে পানি রয়েছে। সেজন্য তরমুজ আমাদের শরীরে পানি অভাব পূরণ করে।
  • তরমুজের মধ্যে যে আয়রন থাকে সে আয়রন আমাদের শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে।
  • তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। আর এই ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়কে শক্ত এবং মজবুত করে।
  • তরমুজ আমাদের হজমে সাহায্য করে এবং মলত্যাগ স্বাভাবিক রাখে। এ ছাড়া শরীর থেকে অন্যান্য দূষিত পদার্থগুলো বের করে দেয়।
  • তরমুজের মধ্যে যে পটাশিয়াম থাকে তা আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে। এছাড়া তরমুজের ফাইবার বা খাদ্য আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি। শরীরের নানা জটিলতা এবং হৃদযন্ত্রের অসুখ-বিসুখ থেকে তরমুজ রক্ষা করে।
  • তরমুজ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। তরমুজের মধ্যে লাইকোপ্যান থাকে। আর এই লাইকোপ্যানের কারণে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয় তা ক্যান্সার কোষকলাকে ধ্বংস করে।
  • তরমুজের মধ্যে যে ক্যারোটিনয়েড থাকে তা চোখের নানা সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
  • তরমুজের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক এবং চুল মসৃণ ও ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ে ক্ষয় শুরু হয়। তরমুজ এই হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। নার্ভস সিস্টেম ভালো রাখে। এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • তরমুজ শরীরের পরিপাক ক্রিয়া সচল রাখে।

তরমুজের মধ্যে লাইকোপ্যান থাকে। আর এই লাইকোপ্যানের কারনে তরমুজ লাল হয়। তমুজের মধ্যে থাকা লাইকোপ্যান ছেলেদের প্রোটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অনেকটা সাহায্য করে। তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা এর মধ্যে আর ও একটি উপাদান রয়েছে সেটি হল ফ্যাট।


তরমুজের মধ্যে যে ফ্যাট থাকে সেটি অনেক উপকারি একটা ফ্যাট। এই ফ্যাটের মধ্যে মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে। যা হৃদযন্ত্রসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যা দূর করে।
তরমুজের মধ্যে যে জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম থাকে তা শরীরের নানা উপকার করে।

তরমুজের অপকারিতা

তরমুজকে ফল এবং সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। আবার তরমুজের জুসও খাওয়া যায়। তরমুজ যখন প্রয়োজনে চাইতে বেশি খেয়ে ফেলবেন তখন শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক তরমুজের অপকারিতা গুলো কি কিঃ

হজমে সমস্যাঃ তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা এর মধ্যে হজমের সমস্যা একটি অন্যতম সমস্যা। আমরা সবাই জানি তরমুজে ৯২ভাগ পানি থাকে। তরমুজ তখন আমরা বেশি খেয়ে ফেলি তখন তরমুজের ভিতরে থাকা এই পানিগুলো আমাদের পেটের ভিতরে গিয়ে পেট ফুলে ওঠে।


হজমে বাধা দেয়। পাতলা পায়খানা হতে পারে, ডায়রিয়া ও হতে পারে এমনকি গ্যাসের সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। তরমুজের মধ্যে যে চিনি থাকে তাতে সরবিটল থাকে। আর এই সরবিটল গ্যাসের সমস্যা ও পাতলা পায়খানা সৃষ্টি করে।

ডায়াবেটিসের সমস্যাঃ তরমুজ মিষ্টি একটি ফল। তরমুজের আকার ভেদে প্রত্যেকটি তরমুজে ৬ থেকে ১০০ কিলো ক্যালরি পর্যন্ত চিনি থাকে। বেশি করে তরমুজ খাওয়ার ফলে এই চিনি আমাদের শরীরের মধ্যে গিয়ে ডায়াবেটিসের সমস্যা কে আরো বাড়িয়ে দেয়।


তাছাড়া চিনি হল ডায়াবেটিসের মূল কারণ। এজন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের পরিমাণ মতো তরমুজ খেতে হয়। যখনই পরিমাণ চাইতে বেশি খেয়ে ফেলবেন তখনই আপনার শরীরের সমস্যা সৃষ্টি হবে। তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা এর মধ্যে ডায়াবেটিসের সমস্যা খুব খারাপ একটা সমস্যা।

যকৃতে প্রদাহঃ যাদের মদ পান বা অ্যালকোহল খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের যতটা সম্ভব তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশি পরিমাণে তরমুজ খেলে তাদের যকৃতে প্রদাহ ও হতে পারে। তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতার এর মধ্যে যকৃতে প্রদাহ একটি অন্যতম কারন। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন থাকে। যা অ্যালকোহলের সাথে বিক্রিয়া করে। এ ধরনের প্রদাহ হলে যকৃতে মারাত্মক ক্ষতি করে।


অতিরিক্ত পানিঃ তরমুজ পানিতে ভরপুর। বেশি তরমুজ খেলে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে করে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। শরীর থেকে যদি তরমুজের পানি বের হয়ে যেতে না পারে তখন শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে পা ফুলে যাওয়া, ক্লান্ত বোধ করা এমনকি কিডনি দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা করতে পারে।


হৃদরোগঃ তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যা আমাদের শরীর ভালো রাখে। তরমুজ আমাদের শরীরের হাড় এবং মাংসপেশি শক্তিশালী করার পাশাপাশি হৃদযন্ত্র ও সুস্থ রাখে। অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম শরীরের ভিতর প্রবেশ করলে তখন হৃদযন্ত্রে নানা সমস্যা দেখা যায়। যেমনঃ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, নারীর গতি কমে যাওয়ার ইত্যাদি। তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা এর মধ্যে হৃদরোগ বড় সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায়।

তরমুজ খাওয়ার আগে আমাদের শরীরের অবস্থান এবং তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা বুঝে তারপর খেতে হবে। এমন করে তরমুজ খাওয়া যাবে না যাতে করে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। এখন নিত্য নতুন দিনে আমাদের শরীরের নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব। সেজন্য তরমুজ খাওয়ার আগে অসুখের মাত্রা এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে তরমুজ খাওয়া উচিত।

তরমুজের বিচির উপকারিতা

তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি তরমুজের বিচির উপকারিতা ও রয়েছে। তরমুজ যেমন খাওয়া যায় ঠিক তেমনি তরমুজের মধ্যে থাকা বিচিরও খাওয়া যায়। এই বিচিতে নানান পুষ্টি হয়েছে। তরমুজের বিচির উপকারিতার কথা না জেনে অনেকেই ফেলে দেন। তরমুজের বিচিতে  কি কি উপকারিতা রয়েছে তার জেনে নেওয়া যাক।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ তরমুজের বিচিতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। এবং হৃদযন্ত্রের গতির ধারা ধরে রাখে। তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে তরমুজের বিচির উপকারিতা রয়েছে।


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়েঃ তরমুজের বিচিতে জিংক রয়েছে। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া সংক্রমণজনিত অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।

হজমে সাহায্য করেঃ তরমুজের বিচিতে আঁশ এবং অপরিশোধিত চর্বি থাকে। এজন্য তরমুজের বিচি হজমের পাশাপাশি পেট পরিষ্কার রাখে।

চুল এবং ত্বক ভালো রাখেঃ তরমুজের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান। এ কারণে চুল এবং ত্বক ভালো থাকে পাশাপাশি ব্রণ কমাতে ও সাহায্য করে।


হাড়ের সুস্থতাঃ আমাদের হাড় সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম তরমুজের বিচির মধ্যে রয়েছে। হাড় ছাড়াও পেশীর কার্যকারিতা বাড়াতে এবং স্নায়ু সচল রাখতে তরমুজের বিচি উপকারী।

লেখকের মন্তব্য

তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

তরমুজের উপকারিতা এবং অপকারিতা পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url