মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক
কয়েল এমন একটা জিনিস যেটা মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকরী। ঘরের মশা তাড়ানোর জন্য বেশিরভাগ সময় আমরা কয়েল ব্যবহার করি। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা খুব সহজেই একটি কয়েল জ্বালিয়ে দেই। কিন্তু এই মশার কয়েলের ধোঁয়ায় ৫টি ক্ষতিকর দিকগুলো রয়েছে সেটা অনেকেই জানি না।
অনেকে জানেন যে কয়েলে শুধুমাত্র মশা তাড়ানো যায়। কিন্তু কোয়েলের যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় সে ধোঁয়ারটা আমাদের শরীরের জন্য যে পরিমাণ ক্ষতি করে তা আমরা অনেকেই জানিনা। আজকে আমরা আলোচনা করব মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। আপনারা যারা মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫ টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানেন না এই পোষ্টের মাধ্যমে মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আর পড়ুনঃ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম
মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য কয়েল ব্যবহার
মশা একটি ছোট পতঙ্গ। এই ছোট মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া,ডেঙ্গু, টুলারোমিয়া, জাপানিজ এনক্যাফেলাইটিস, বারমা ফরেস্ট ফিভারের মতো নানা ধরনের জটিল রোগের সম্ভাবনা থাকে। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এই দুইটি সবচাইতে বেশি ভয়ংকর।
প্রতিবছর ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়াতে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। সেজন্য আমরা মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য খুব সহজেই কম খরচে কয়েল ব্যবহার করি। কয়েলের চাইতে মশারি ব্যবহার করা পরিবেশ বান্ধব। মশারিতে কোন ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা পদার্থ থাকে না এজন্য মশারির ব্যবহার করার সবচাইতে নিরাপদ।
আর পড়ুনঃ গরমে পানি ঠাণ্ডা রাখার ১০টি উপায়
অপরদিকে কয়েলের বিভিন্ন রাসায়নিক এবং কেমিক্যাল মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়। কয়েলের ধোঁয়া এবং গন্ধ দুটিই আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক রয়েছে তেমনি এ থেকে আমরা মশার হাত থেকে বাঁচতেও পারি।
কিছু পরেও আমরা মশারির চাইতে কোয়েলকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এবং বেশি ব্যবহার ও করি। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের মশারি ব্যবহার করতে হবে। কয়েলকে কম ব্যবহার করতে হবে।
আর পড়ুনঃ পানিকে আর্সেনিক মুক্ত করার উপায়
আর পড়ুনঃ এসি ছাড়া ঘর ঠাণ্ডা করার সহজ উপায়
মশার কয়েলে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়
মশার কয়েলের প্রধান উপাদান পাইরোফ্রয়েড। প্রাকৃতিক যৌগ পাইরো গ্রাম থেকে পাইরোফ্রয়েড পাওয়া যায়। অ্যালেট্রিন এর মত সহধর্মী যৌগ থেকে এই পাওয়া যায়। ম্যাটেও অনুরূপ কিছু পাইরোফ্রয়েড থাকে আর সেখানে অনবরত নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োগ করতে হয়। তাপ পাওয়ার পরে ম্যাটের পাইরোফ্রয়েড বাষ্পীভূত হয়।
নির্দিষ্ট পরিমাণে তাপমাত্রা প্রয়োগ করার জন্য এই ম্যাটকে ম্যাট হিটারের হিট পেটের মধ্যে রাখা হয়।কীটনাশক ডিডিটি বা পিন্ডেনের মত ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন,প্যারাফিনে মত আরপ্যানো ফসফরাস যৌগ এবং কার্বন হলো পাইরো এর আসল উপাদান। বেশিরভাগ মশার কয়েলে অ্যালেট্টিন নামক উপাদান থাকে।
এই অ্যালেট্টিন এর সাথে ফেনল এবং ক্রেসল নামের দুইটি জৈব যৌগ ব্যবহার করা হয়। কয়েলের মধ্যে ব্যবহৃত উপাদান গুলোর পরিমাণ মানুষের সহনীয় মাত্রার মধ্যে থাকে। কিন্তু কতটুকু সহনীয় মাত্রার মধ্যে থাকে সেটা এখনো কিছু কিছু কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভালোমতো জানেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কতগুলো কীটনাশক গুলোকে মশার কয়েলের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ বলে চিহ্নিত করেছেন।
কিন্তু সেটার মান আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারণ হয়নি। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে ১টা কয়েল থেকে যে পরিমান ধোঁয়া সৃষ্টি হয় তা ১০০টি সিগারেটের ধোঁয়ার সমান। আবার এই মশার কয়েলের ধোঁয়ায় যে সব মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান থাকে তা মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
আর পড়ুনঃ বজ্রপাত থেকে বাঁচার ২৫টি উপায়
মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক
কয়েল ব্যবহার করলে আমাদের শরীরের জন্য কি কি ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে আমরা জানব। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক সমূহঃ
শ্বাসকষ্ট সমস্যাঃ মশা তাড়ানোর জন্য আমরা যে কয়েল ব্যবহার করি সেই কয়েল থেকে যে ধোঁয়া বের হয় সে ধোঁয়াতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত উপক্রম হয়। অনেক সময় কাশি হয়। যারা শ্বাসকষ্টে ভুগেন তাদের জন্য মশার কয়েলের ধোঁয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং শ্বাসরুদ্ধকর। মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে এটি একটি।
চোখ মুখ জ্বলাঃ মশার কয়েলের যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় সে ধোঁয়াতে অনেক সময় আমাদের চোখ মুখ জ্বালাপোড়া করে। যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের চোখ লাল হয়ে যায় এবং চুলকানো আরম্ভ করে। চোখ চুলকানো ফলের চোখ ফুলে যায় এবং তাকাতে অনেক কষ্ট হয়।
মাথা ব্যথাঃ মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে এটি একটি অন্যতম। যাদের মাথা ব্যথার সমস্যা রয়েছে একটু কিছু হলেই মাথা ব্যথা করে তাদের মশার কয়েল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা কোন কিছুর গন্ধ সহ্য করতে পারেন না তাদেরকে মশার কয়েল ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
আর পড়ুনঃ বজ্রপাত কিভাবে এবং কেন হয়
মশার কয়েলে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় সে ধোঁয়াতে প্রচুর পরিমাণ গন্ধ বের হয়। এই গন্ধ আমাদের নাক মুখ এবং চোখের সংস্পর্শে আসলে শরীরের নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
বমি বমি ভাবঃ যাদের শরীরে নানান রকম জটিলতা রয়েছে তারা মাএাতিরিক্ত কোন কিছু সহ্য করতে পারেন না। সেজন্য অনেক সময় কয়েলের ধোঁয়া তাদের জন্য নানান সমস্যা সৃষ্টির করে। এমনকি বমি বমি ভাব হয় এবং অনেকে বমি করে ফেলেন।
মরণ ব্যাধি রোগঃ দীর্ঘদিন ধরে মশার কয়েল ব্যবহারের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। শ্বাস কষ্ট এলার্জি চোখের সমস্যা ত্বকের চামড়ার সমস্যা শরীরে নানারকম শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য আমাদের উচিত মশার কয়েল ব্যবহার না করা।
মশার কয়েলের ক্ষতিকর কেমিক্যাল আগুনে আরও বেশি ক্ষতিকর রূপ ধারণ করে। সেজন্য মশার কয়েলের পরিবর্তে মশারি ব্যবহার করা উচিত। মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক এর মধ্যে এটি সব চেয়ে ক্ষতিকর।
কয়েল কিভাবে তৈরি করে
অতীতের একটা সময় বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে মশা তাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক ধোঁয়া ব্যবহারের প্রচলন ছিল। ধারণ করা হয় এই প্রাকৃতিক ধোঁয়া বর্তমানে মশার কয়েল আবিষ্কারকে সহজ করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন বর্ণের এবং বিভিন্ন দামের কয়েল বাজারে পাওয়া যায়। মূলত এসব কয়েল নানা রকম কীটনাশক এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি হয়।
কাঠের গুড়া, গবর ইত্যাদি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাসায়নিক কীটনাশক মিশিয়ে কয়েলে তৈরি করা হয়। এবং এতে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। এতে করে কয়েল পোড়ার সাথে সাথে কয়েল থেকে ভালো সুগন্ধ বের হয়।
বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশকের মধ্যে যেগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো পাইরিথ্রিন, অ্যালেথ্রিন, এসবায়োথ্রিন, মিপারফ্লুথ্রিন, বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সিটলুইন, পাইপেরোনাইল বিউটক্সাইড, এন-অক্টাইল বাইসাইক্লোহেপটিন ডাইকারবক্সিমাইড, ডাইমেফ্লুথ্রিন, মেটোফ্লুথ্রিন, পাইনামিন ফোর্ট, অক্টাক্লোরোডাইপ্রোপাইলইথার এর মতো রাসায়নিকের সঙ্গে বাইন্ডার এবং কয়েলের নিয়ন্ত্রিত দহনের জন্য জ্বালানি হিসেবে নানারকম পদার্থ মিশিয়ে তৈরি হয় মশার কয়েল। এই সব রাসায়নিকের জন্য মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক সৃষ্টি হয়।
মশার কয়েলের ধোঁয়ার ক্ষতিকারক দিক
বদ্ধ স্থানে মশা তাড়ানোর জন্য কয়েলের ধোঁয়া খুব কার্যকরী। মশার কয়েলে ধোঁয়ায় বিদ্যমান বিভিন্ন বিষাক্ত জৈব এবং অজৈব বাষ্প প্রচুর পরিমাণে সুক্ষ ও অতি সূক্ষ ভাসমান কনা এবং কয়েলের পুড়ে যাওয়া থেকে উৎপন্ন ডিহাইড বেনজিন বেনজোপাইরিন বেনজোফ্লিউরো অ্যানথিন ইত্যাদি বিষাক্ত ও উদ্বায়ী যৌগ পদার্থ চারিদিকে ছড়িয়ে পরে মশা তাড়ায়।
এসব ক্ষতিকর ধোঁয়া বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মারাত্মক ক্ষতি করে। এইসব ক্ষতিকর যৌগগুলো মানুষের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সাধারণত একটি কয়েল ৮ ঘণ্টার মতো জ্বলে। এরকমভাবে যদি মশার কয়েল ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ব্যবহার করা হয় তাহলে কয়েলের মশার বিষাক্ত ধোঁয়া ধীরে ধীরে আমাদের শিরা,উপশিরা, রক্তনালী, ছাড়াও পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
আর পড়ুনঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায়
এতে করে শ্বাসকষ্ট ,ফুসফুসে, ক্যান্সার, মস্তিষ্কে ক্যান্সার ইত্যাদি অনেকটাই বেড়ে যায়। ২.৫ মাইক্রোমিটার কম এবং অতি সূক্ষ্ম ভাসমান কনা গুলো আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে অনায়াসে একেবারে ভেতর পর্যন্ত ঢুকে যায়। আর সব থেকে সূক্ষ্ম কনাগুলি আমাদের রক্তের মধ্যে খুব সহজেই মিশে যায়।
রক্তের মধ্যে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা এসব কনাগুলো মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করে। এগুলো শুধু ফুসফুস, হাট, মস্তিষ্ক ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের ক্ষতিকর না ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কেও দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে। সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য কয়েল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক রয়েছে এই ক্ষতিকর দিক আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে বাঁধা গ্রস্থ করবে।
সর্বশেষ
মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে পড়ে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
মশার কয়েলের ধোঁয়ার ৫টি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সম্পর্কে পড়ে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url