গরমে সুস্থ থাকার উপায়

দিন দিন গরমের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। আর এই গরমের সাথে সাথে আমাদের নানাবিধ সমস্যা আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় বা কি করলে আমরা গরমে সুস্থ থাকতে পারব সেই বিষয় নিয়ে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তার পর ও যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
ছোট ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধা, বয়স্ক, বিশেষ করে দিন মজুর, খেটে খাওয়া মানুষ গুলো এই গরমে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আজ আমরা গরমে সুস্থ থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। আপনি যদি এই গরমে সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই গরমে সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন।

শরীর সুস্থ রাখার জন্য কোন খাবার খাওয়া উচিত

মনকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে। আর এজন্য আমাদের শরীরকে ভালো রাখার জন্য ভালো মন্দ খাবার গ্রহণ এবং সুস্থ থাকা প্রয়োজন। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সাথে সাথে আমাদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
তাছাড়া ঘুম, শরীরচর্চা এসবের ও প্রয়োজন আছে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখতে হবে যে খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীরে পুষ্টি বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, দেহের শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে, ক্ষয় পূরণ এবং শক্তি উৎপাদনে কাজ করে।

খাদ্যে ৬টি প্রধান পুষ্টি উপাদান থাকে যেমনঃ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি। প্রতিদিন খাদ্য তালিকা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফলমূল ইত্যাদি রাখতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শরীর সুস্থ রাখার জন্য কোন খাবার খাওয়া উচিত।

সবুজ শাকসবজিঃ  সবুজ-শাকসবজি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, খনিজ পদার্থ, লৌহ,মিনারেল ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের শরীরের সার্বিক বৃদ্ধি ঘটায়।


লালশাক, পালং শাক, পুই শাক, সবুজ শাক, কচু শাক, কলমি শাক, ডাটা শাক সহ যে সকল শাক আমাদের আশেপাশে পাওয়া যায় সেই সকল শাক গুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।গরমে সুস্থ থাকার উপায় বা গরমে যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি এবং তরল খাবার খান। তরল খাবারের মধ্যে রয়েছে পেঁপে, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিকাঙ্গা ইত্যাদি।

এই সকল সবজি কখনো আমাদের শরীরে ক্ষতি করে না। যারা গরমে সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে বা শরীর সুস্থ রাখার জন্য কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত এইসব বিষয় নিয়ে জানতে চান তাদেরকে সর্বপ্রথম আমরা বলে থাকি বেশি বেশি সবুজ সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

সবুজ শাক সবজির ভিতরে থাকা খনিজ এবং জৈব পদার্থগুলো আমাদের শরীরে বেরিয়ে যাওয়ার খনিজ এবং জৈব পদার্থের চাহিদা পূরণ করে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য সবুজ-শাকসবজি খাবার খাওয়া উচিত।

দেশীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস করাঃ আমাদের দেশে আনাচে-কানাচে অনেক রকমের ফল পাওয়া যায়। যেমনঃ আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, শসা ইত্যাদি। এইসব ফলগুলো যেমন সুস্বাদু এবং তেমন সহজ লভ্য। এসব দেশীও ফলে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী অনেক পুষ্টি এবং ভিটামিন রয়েছে।

পাকা এবং কাঁচা দুই ভাবে এসব ফল খাওয়া যায়। ফল খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য প্রতিদিন অল্প করে হলেও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, গরমের সময় অতিরিক্ত কোন ফল খাওয়া যাবেনা।

কারণ আপনি যখনই গরমে অতিরিক্ত ফল খাবেন তখনই সেটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য দেশীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

বেশি বেশি পানি খাওয়াঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য বেশি বেশি পানি করা উচিত। আমরা প্রতিদিন যা কিছু খাই না কেন পানি লাগেই। পানি জীবন ধারনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ধারণের জন্য পানির কোন বিকল্প নেই।


কাজেই আমরা প্রতিদিন বেশি বেশি পানি খাওয়ার চেষ্টা করব। কারণ বেশি বেশি পানি পান করলে আমাদের শরীরে পানি স্বল্পতা দূর হয়ে যাবে। সেই সাথে আমাদের শরীরের ক্ষতিকর বর্জ্য এবং পদার্থগুলো মূত্র আকারে বাহিরে চলে যাবে। প্রতিদিন পরিশ্রম করার ফলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে।

তখন আমাদের শরীরে পানি সল্পতা দেখা দেয়। অনেক সময় পানি সল্পতার জন্য আমাদের কিডনি এবং লিভার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তাছাড়া গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৭ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। গরমের সুস্থ থাকার জন্য খাবার গ্রহণের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়াঃ যে সব খাবারে ভিটামিন পাওয়া যায় সেই সকল খাবার খেতে হবে। শরীরের সব কিছুর প্রয়োজন পড়ে। আমাদের শরীরের সুষ্ঠু বিকাশ, হাড়ের গঠন, দাঁতের গঠন, মেধা বিকাশ ইত্যাদি আরও নানান কারণে ভিটামিন জাতীয় খাবারের প্রয়োজন পড়ে। সেজন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু না কিছু ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখা উচিত। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়া করা উচিত।

আমিষ, চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়ামঃ যে সকল খাবার খেলে আঁশ জাতীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয় সেই সকল খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে সবুজ শাক-সবজিতে আমিষ বেশি থাকে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমিষ, চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া করা উচিত।

 চর্বি হাড়ের সুষ্ঠু বিকাশে সহায়তা করে। বিভিন্ন মাছের তেল, মাংস, মাংসের তেল এ সকল খাবারে চর্বি পাওয়া যায়। এছাড়া যে সকল খাবার খেলে আমাদের শরীরে প্রোটিন, ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ হয় সেই সকল খাবার খেতে হবে। দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।


তৈলাক্ত এবং ভাজাপোড়া থেকে দূরে থাকাঃ তৈলাক্ত এবং ভাজাপোড়া জিনিস আমাদের হজমে বাধা প্রদান করে। সেজন্য তৈলাক্ত এবং ভাজাপোড়া জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে।

নেশা থেকে দূরে থাকাঃ নেশা এমন একটা জিনিস যেটা আমাদের শরীরকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। সিগারেট, মদ,গাঁজা, হিরোইন, ফেন্সিডিল,তামাক সহ আরো বিভিন্ন নেশা জাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে।

এছাড়া শরীর কে সুস্থ সুন্দর এবং স্বাভাবিকভাবে রাখতে হলে নিয়মিত শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। উপরোক্ত ভিটামিন গুলো আমরা যতই ভালোভাবে খাই না কেন যদি আমরা আমাদের শরীরের পরিচর্যা না করি তাহলে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া করা উচিত।

কাজেই ভিটামিনের অভাব পূরণের পাশাপাশি শরীর চর্চা বা শরীরের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিকল্প নেই। গরমের সুস্থ থাকার উপায় হচ্ছে বেশি বেশি পানি খাওয়া এবং বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া। কারন আমরা গরমের মধ্যে যত বেশি খাবার খাব সে খাবার গুলো আমাদের পেটের ভিতরে গিয়ে ঠিক মতো হজম না হওয়ার কারণে আমাদের নানান সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়

অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সুস্থ শরীরের মূল্য বোঝা যায় না। যে অসুস্থ হয় সেই কেবলমাত্র বোঝে সুস্থ শরীর কত গুরুত্বপূর্ণ। আর অসুস্থতা সেটা কত যে অস্বস্তিকর সেটা অসুস্থ ব্যক্তিরাই বুঝতে পারেন। অনেকেই আছেন যারা শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। তারা জানেন না শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় গুলো কি কি।


গরমে সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় কি কি?? বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীর দুর্বল হতে পারে। কখনো ভিটামিনের সমস্যা কখনো পর্যাপ্ত ঘুম কখনো অতিরিক্ত মানসিক এবং শারীরিক পরিশ্রম এবং আরো অনেক কারণ থাকতে পারে। আবার গরমের সময় অত্যাধিক গরমে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।


কিন্তু এই দুর্বল শরীরকে সুস্থ সবল করে কিভাবে তুলবেন তা কি জানেন??? অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না। এই জানা অজানার মধ্যে গরম সুস্থ থাকার উপায় এবং শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় গুলো জেনে নিনঃ
হঠাৎ করে যদি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো
  • গরম লাগলে ফ্যান বা এসির নিচে যান। এবং শরীরটাকে একটু ঠান্ডা করেন।
  • এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করুন। যদি সম্ভব হয় তাহলে স্যালাইন কিংবা শরবত মিশ্রিত পানি খান।
  • এরপর যদি প্রয়োজন হয় তাহলে গোসল করুন। কারণ অত্যাধিক গরমে আমাদের শরীর একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ঠান্ডা পানিতে ভালোমতো গোসল করতে হবে। যেন শরীর এবং মাথা ঠান্ডা হয়।
  • অত্যাধিক গরমে যদি মাথা ঘুরায় তাহলে এক জায়গায় বসে পড়ুন। হালকা করে মাথায় এবং চোখে মুখে ঠান্ডা পানি ধাপটা দিন। এবং পানি খান।
  • এরপর কিছুক্ষণ বসে থাকুন। প্রয়োজনে বাতাস করুন।
  • কিছুটা সময় রেস্ট বা আরাম করুন। প্রয়োজনে কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নিন। অনেক সময় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়।
  • এরপর যদি সম্ভব হয় এক গ্লাস গরম গরম দুধ খেয়ে নিন।

দীর্ঘদিন ধরে শরীর দুর্বল থাকলে করণীয়

দীর্ঘদিন ধরে শরীর দুর্বল থাকলে আমরা নানা জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। এই জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে যা করা প্রয়োজন তা হল।
  • প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকায় সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
  • প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় একটি করে ডিম, এক গ্লাস দুধ, দুটি কলা, একটি পাউরুটি, ১টি আপেল, আঙ্গুর ফল এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে দেশিও ফল খেতে হবে।
  • রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, এবং সকালে তারাতারি ঘুম থেকে উঠুন।
  • যদি পেটে গ্যাস থাকে তাহলে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে গ্যাস খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
  • নিয়ম মেনে তিন বেলা পেট ভরে বা আপনার যতটুকু খাবারের প্রয়োজন ততটুকু খাবার খান।
  • আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেল জাতীয় খাবার রাখুন।
  • নেশা জাতীয় কোন কিছু খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা খুব দ্রুত পরিহার করুন।
  • প্রতিদিন শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করুন।
  • শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম কম করুন।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। সাথে কিছুটা শরবত খান।
  • প্রতিদিন রাতে বাদাম, ছোলা, কিচমিচ, খেজুর, ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে তা খান।  

শরীরের দুর্বলতা কাটাতে যা খেতে হবে

প্রোটিনঃ মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম এবং বিভিন্ন বেকারি প্রোডাক্ট এগুলো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। প্রোটিন জাতীয় খাবার শরীর বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের স্থায়িত্ব শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। যা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।

সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূলঃ সুস্থ থাকতে এবং শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ফলমূলের কোন বিকল্প নেই। কেননা সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূলে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং শরীর সম্প্রসারণ করতে সাহায্য করে।

কার্বোহাইড্রেটঃ আটা, ব্রাউন, রাইস, কুইনোয়া, ওটমিল, পাস্তা ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার শরীরের শক্তি সঞ্চয় করে।


ফ্যাটঃ খাবারে ফ্যাট বা চর্বি থাকতে হবে। অলিভ অয়েল, নারিকেলের তেল, নারিকেলের শাস, বাদাম, ইত্যাদি খেতে হবে। ফ্যাটে রয়েছে ভিটামিন "এ" এবং "ডি"। যা পুষ্টি সম্প্রসারণ এবং শরীরের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক।

ভিটামিন সিঃ শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ভিটামিন 'সি' বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আঙ্গুর ফল, কমলালেবু, লেবু, তেঁতুল, কাঁচামরিচ, লেটুস পাতা, লেবু পাতা ইত্যাদিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। কাজেই ভিটামিন 'সি' বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

গরমে সুস্থ থাকার উপায়

গরমে আমাদের শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়, আবার কখনো হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তীব্র গরমে বিশেষ করে শিশু, কিশোর, বয়স্ক, অসুস্থ, এবং খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে এবং ঝুঁকিতে থাকে। এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে বেশ কিছু উপায় মেনে চলা উচিত।
  • গরমের সুস্থ থাকার উপায় এর জন্য বেশি বেশি পানি পান করা উচিত। সব সময় নিজের কাছে একটা বোতলে পানি রাখা। বাহিরে কোথাও যাওয়ার আগে ছাতা বা ক্যাপ নিয়ে বের হওয়া। রোদের প্রকোপ থেকে ছাতা এবং ক্যাপ আমাদের রক্ষা করে।
  • মাথাকে সবসময় ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। গরমে অত্যাধিক মাথা গরম হয়ে যায়। আর মাথা গরম হয়ে গেলে যে কোন সময় মাথা ঘুরানো, স্টক করার সম্ভাবনা থাকে। গরমে সুস্থ থাকতে হলে আগে মাথাকে ঠান্ডা রাখতে হবে।
  • নিয়মিত স্যালাইন খাওয়া। স্যালাইন খেলে আমাদের শরীরে পানি স্বল্পতা পূরণ হয়।
  • সরাসরি রোদ এড়িয়ে ছায়াযুক্ত স্থান দিয়ে চলাফেরা করা।
  • গরমে সবসময় হালকা রঙ এবং হালকা কাপড় ব্যবহার করা। গরমে সুস্থ থাকতে হলে ঢিলেঢালা, নরম পোশাক পরিধান করতে হবে। চাপা বা আঁটসাঁট পোশাক পড়া যাবে না।
  • সূর্যের আলো থেকে চোখ এবং মুখমন্ডলকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস এবং প্রয়োজনীয় ক্রিম ব্যবহার করা।
  • গরমে সুস্থ থাকার উপায় এর যে সময় বাইরে তাপমাত্রা বেশি থাকে সে সময় কাজে বিরতি দেওয়া। এবং বাহিরে না যাওয়া।
  • শরবত, তরমুজ, এবং ঠান্ডা জাতীয় জিনিস বেশি বেশি খাওয়া।
  • একটানা রোদে কাজ না করা। একটানা রোদে যখনই কাজ করবেন তখনই আপনার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে এবং হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
  • ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা। বারবার মুখমন্ডল ধুয়া। বাইরে থেকে আসার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ মুখ এবং হাত পা ধুয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে গোসল করে নিতে হবে।
  • গরমে সুস্থ থাকার উপায় এর ফ্যান বা ঠান্ডা আরামদায়ক জায়গায় অবস্থান করা। যদি এসি থাকে তাহলে এসির তালে অবস্থান করা। তবে অতিরিক্ত এসির বাতাস কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতি করে।
  • গরমের মধ্যে অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া যাবে না। এগুলোতো এমনিতেই গরম তার মধ্যে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে এগুলো খেলে আমাদের শরীর আরও কড়া হয়ে যাবে।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য প্রতিদিন নিয়ম মতো গোসল করতে হবে। প্রয়োজনে দুবেলা গোসল করতে হবে। আর গোসল সবসময় ঠান্ডা পানি দিয়ে করতে হবে।

শসা,ডাব, কলা, তরমুজ, স্ট্রবেরি এসব ফল খাওয়া। এসব ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং লবন রয়েছে।
গরমের সুস্থ থাকার উপায়ের জন্য তরল, সবুজ জাতীয় শাকসবজি এবং ফলমূল বেশি বেশি খাওয়া। তরল খাবারের মধ্যে রয়েছে লাউ, ঝিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া।

লাউ এবং মিষ্টি কুমড়ার ডগা, সজনে ডাঁটা, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদ বেশি করে খেতে হবে। এগুলো খেলে গরমের অনুভূতি কমায় এবং পেট ভালো থাকে। মাছ-মাংসের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমিয়ে দেওয়া।

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার খাবার

আমাদের শরীর এমনিতেই স্বাভাবিক ভাবে গরম থাকে। গরমের সময় শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে আরও বেশি গরম হয়ে থাকে। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এমন কিছু খাবার খেতে হবে যে খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকবে। আমরা স্বস্তি এবং আরাম পাব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার খাবার গুলো কি কিঃ
পানিঃ এক কথায় আমরা সবাই জানি পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ৩-৭ লিটার পানি পান করার প্রয়োজন হয়। অত্যাধিক গরমের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সাথে যেকোনো ধরনের ফলমূল খেতে হবে। কারণ ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এর জন্য পানি অপরিহার্য একটা উপাদান।


লাউ, মিষ্টি কুমড়াঃ লাউ এবং মিষ্টি কুমড়া সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি খুব নরম এবং সহজে হজম হয়। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এই খাবার গুলো খেতে হবে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় এর জন্য এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় লাউ এবং মিষ্টি কুমড়া ভালো একটি খাবার। কুমড়া গরমে অন্যান্য খাবারের মধ্যে লাউ এবং মিষ্টি কুমড়া আমাদের শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। সেজন্য গরমে বেশি বেশি দুটি খাবার খাওয়া উচিত। প্রয়োজনের লাউয়ের স্যুপ করে খেতে পারেন।

পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, জালিঃ গরমে পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, জালি এগুলো খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। এগুলো এক দিকে নরম অন্যদিকে তরল খাবার। এসব খাবার হজমে দ্রুত সাহায্য করে।

পুদিনা পাতাঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায় এর জন্য পুদিনা পাতা খেতে পারেন। পুদিনা চাটনি করে পরোটার সঙ্গে খাওয়া যায়। অনেক সময় কোন ফলের বা কোন শরবত করলে তাতে পুদিনা পাতা দিতে পারেন। ডিটক্স ওয়াটার বানানো সহজ উপায় হলো পানি, পুদিনা পাতা আর লেবু। পুদিনা পাতা এবং লেবু দিয়ে মিশিয়ে ডিটক্স ওয়াটার বানানো যায়। হজম শক্তি বাড়াতে পুদিনা পাতার এই পানীয় সাহায্য করে।


দইঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায় হল দই খাওয়া। দই অত্যন্ত সুস্বাদু এবং ঠান্ডা একটি খাবার। আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য দই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দিনে অন্তত এক বাটি দই খাওয়ার অভ্যাস করুন। দই শুধু শরীর ঠান্ডা নয় আমাদের হজমেও সাহায্য করে।গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য সকাল এবং বিকালে দই এবং চিড়া খেতে পারেন ।

তালের রসঃ তালের রস অত্যন্ত ঠান্ডা একটি পানীয়। গরমে সুস্থ থাকার উপায় আর একটি উপায় হল। তালের রস। গরমের সময় যদি কেউ এক গ্লাস তাহলে রস খেতে পারে তাহলে তার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে। তবে অতিরিক্ত এবং নষ্ট হওয়া তালের রস খাওয়া যাবে না। নষ্ট হওয়ার তালে রস খেলে মাতাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং আমাদের শরীরের ও ক্ষতি করে।

শরবত বা জুসঃ গরমে সুস্থ থাকার উপায় হল ঠাণ্ডা পানি, আখের রস, এবং শরবত। শরবত আমাদের শরীরের পুষ্টিচাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি শরীরকে ঠান্ডা রাখে। গরমে যখন শরীর ক্লান্ত বা দুর্বল হয়ে যায় তখন এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত বা ঠান্ডা জুস আপনার শরীরকে সতেজ করে তোলে। সে জন্য গরমের সময় ঠান্ডা পানি, শরবত বা জুস খেতে হবে।


তরমুজঃ তরমুজের ৯২ ভাগ পানি। তাছাড়া তরমুজে ক্যালরি খুব কম থাকে। যারা ওজন কমাতে চান তারা যদি নিয়মিত তরমুজ খান তাহলে আপনার ওজন কমে যাবে। এছাড়া তরমুজ উচ্চ লাইকপেন সমৃদ্ধ। যেটি ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে । এছাড়া তরমুজ খেলে ত্বক এবং চুল সুন্দর হয়। তর সাহায্য করে। গরমে সুস্থ থাকার উপায় হল তাজা এবং সতেজ তরমুজ খাওয়া।

ডাবের পানিঃ গরমের সুস্থতার আর ও একটি পানীয় হল ডাবের পানি। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটস। ডাবের পানি শরীরে এনার্জি বাড়াতে সহায়তা করে। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং গরমে সুস্থ থাকার উপায় হল নিয়মিত ডাবের পানি পান করা।

শসাঃ  শশা একটি মৌসুমী ফল হলেও বর্তমানে একে সারা বছর পাওয়া যায়। শশা যে কোন সময় খাওয়া যায়। গরমকালে শসা সালাদ হিসেবে খাবার জন্য বেশ জনপ্রিয়। শসা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, ডিহাইড্রেশন হয় না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর। গরমে সুস্থ থাকার উপায় হল শসা খাওয়া। শসা ঠাণ্ডা একটা ফল।

লেবুর শরবতঃ রোদ থেকে ফিরে বা বাহির থেকে আসার পরে শরীর একটু ঠান্ডা করে তারপর লেবুর শরবত খেতে পারেন। লেবুর শরবত খেলে অস্থিরতা কমবে এবং সতেজতা ফিরে আসবে। লেবুর শরবত হজম শক্তির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি যদি পাতলা পায়খানার সমস্যা হয়ে থাকে তো সেক্ষেত্রে লেবুর শরবত অনেক বেশি কার্যকরী। গরমে সুস্থ থাকার বেশি বেশি লেবুর শরবত খান।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url