জিআই (GI) পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

জিআই (GI) পণ্য বা জিআই (GI) এই নামটা আমরা এর আগে অনেক শুনেছি। এই জিআই (GI) জিনিসটা বা GI পণ্য কি এইটা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি, আবার অনেকেই জানি না। আজ আমরা GI পণ্য সম্পর্কে আলোচনা করবো। GI পণ্য সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়তে হবে।

GI কি ? GI কে স্বীকৃত প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কি

জিআই (GI) হলো ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্ন। কোন একটি পণ্য নির্দিষ্ট জায়গায় উৎপত্তি, বিশেষ গুনাগুন, চাহিদা, জনপ্রিয়তা ইত্যাদির কারণে সে পণ্যটি জিআই (GI) পন্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জিআই পণ্যের নামের সাথে  (শহর, অঞ্চল, দেশ) অর্থাৎ এর উৎপত্তিস্থলের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকে। জিআই (GI) পণ্যকে WIPO প্রতিষ্ঠান স্বীকৃত প্রদান করে। WIPO-World intellectual property organization.

সর্বমোট স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্য কতটি ও কি কি

২০২৩ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত মোট ১৭টি পণ্য জিআই (GI) পণ্য হিসাবে স্বীকৃত পেয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২২ পণ্য জিআই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এবং আর ২টি পণ্য জিআই (GI) হিসাবে অপেক্ষমানের তালিকায়  রয়েছে। 



বাংলাদেশের স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যগুলো হলঃ

১. টাঙ্গাইলের জামদানী শাড়ি
১ম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল টাঙ্গাইলের জামদানী শাড়ি।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC )। 
নিবন্ধিত হয়ঃ ১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ 
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ সেপ্টেম্বর,২০১৬

২. বাংলাদেশের ইলিশ। 
২য় স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল বাংলাদেশের ইলিশ।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর।
নিবন্ধিত হয়ঃ ১৩ নভেম্বর, ২০১৬
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ আগষ্ট, ২০১৭

৩. চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাত আম।
৩য় স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরসাপাত আম।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI)।
নিবন্ধিত হয়ঃ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

৪. দিনাজপুরের কাটারীভোগ।
৪র্থ স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল দিনাজপুরের কাটারীভোগ।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)।
নিবন্ধিত হয়ঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ জুন, ২০২১

৫. বিজয়পুরের সাদা মাটি।
৫ম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল বিজয়পুরের সাদা মাটি।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নেত্রকোনা।
নিবন্ধিত হয়ঃ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ জুন, ২০২১

৬. বাংলাদেশের কালিজিরা।
৬ষ্ঠ স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল বাংলাদেশের কালিজিরা।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)।
নিবন্ধিত হয়ঃ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ জুন, ২০২১

৭. রংপুরের শতরঞ্জি।
৭তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল রংপুরের শতরঞ্জি।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC )।
নিবন্ধিত হয়ঃ ১১ জুলাই, ২০১৯
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ জুন, ২০২১

৮. রাজশাহীর সিল্ক।
৮ম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল রাজশাহীর সিল্ক।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড (BSDB)।
নিবন্ধিত হয়ঃ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ জুন, ২০২১

৯. ঢাকার মসলিন।
৯ম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল ঢাকার মসলিন।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড (BHB)।
নিবন্ধিত হয়ঃ ২ জানুয়ারি, ২০১৮
স্বীকৃতি পায়ঃ ১৭ জুন, ২০২১

১০. বাগদা চিংড়ি।
১০ম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল বাগদা চিংড়ি।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর।
নিবন্ধিত হয়ঃ মে, ২০১৯
স্বীকৃতি পায়ঃ ২৪ এপ্রিল, ২০২২

১১. রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের- ফজলি আম।
১১তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ ফল গবেষনা ইনস্টিটিউট রাজশাহী এবং ফল গবেষণা কেন্দ্র ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এসোসিয়েশন।
নিবন্ধিত হয়ঃ ৯ মার্চ, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ২৫ এপ্রিল, ২০২৩

১২. শেরপুরের তুলশীমালা ধান।
১২তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল শেরপুরের তুলশীমালা ধান।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ জেলা প্রশাসক, রংপুর।
নিবন্ধিত হয়ঃ ১১ এপ্রিল, ২০১৮
স্বীকৃতি পায়ঃ ১২ জুন, ২০২৩

১৩. চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম এবং আশ্বিনা আম।
১৩ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম এবং আশ্বিনা আম।আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
নিবন্ধিত হয়ঃ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
স্বীকৃতি পায়ঃ ২৬ জুন, ২০২৩

১৪. বগুড়ার দই।
১৪ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল বগুড়ার দই।
আবেদনকারী ও সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বগুরা জেলা শাখা।
নিবন্ধিত হয়ঃ ১ জানুয়ারি, ২০১৮
স্বীকৃতি পায়ঃ ৫ জুলাই, ২০২৩

১৫. সিলেটের শীতল পাটি ।
১৫ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল সিলেটের শীতল পাটি ।
নিবন্ধিত হয়ঃ১৬ মার্চ, ২০২৩
স্বীকৃতি পায়ঃ ২০ জুলাই, ২০২৩ 

১৬. নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
১৬তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
নিবন্ধিত হয়ঃ ৩০ মার্চ, ২০২৩
স্বীকৃতি পায়ঃ ৮ আগস্ট, ২০২৩

এছাড়াও সর্বশেষ যেসব পণ্য জিআই হিসেবে স্বীকৃত লাভ করেছে সেগুল হলোঃ

১৭. বাংলাদেশের ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল।
১৭তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল বাংলাদেশের ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ 

১৮. টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম।
১৮তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ 

১৯. কুমিল্লার রসমালাই।
১৯তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল কুমিল্লার রসমালাই।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৯ জানুয়ারি, ২০২৪  

২০. কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
২০তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ 

২১. যশোরের খেজুরের গুড়। 
২১ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল যশোরের খেজুরের গুড়
স্বীকৃতি পায়ঃ ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ 

২২. টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি।
২২ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ 

২৩. নরসিংদীর অমৃত সাগর।
২৩ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল নরসিংদীর অমৃত সাগর।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪  

২৪. রাজশাহীর মিষ্টি পান
২৪ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল রাজশাহীর মিষ্টি পান
স্বীকৃতি পায়ঃ ৮ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ 

২৫. গোপালগঞ্জের রসগোল্লা।
২৫ তম স্বীকৃত প্রাপ্ত জিআই (GI) পণ্যটি হল গোপালগঞ্জের রসগোল্লা।
স্বীকৃতি পায়ঃ ৮ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ 


ডিপিডিটি তথ্য অনুযায়ী আরো যে ১৪ টি পণ্যের আবেদন জমা পড়েছে সেগুলো হলঃ
  • নরসিংদীর লটকন
  • জামালপুরের নকশি কাঁথা
  • মধুপুরের আনারস
  • সুন্দরবনের মধু
  • মৌলভীবাজারের আগর আতর
  • রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম
  • মুক্তা গাছার মণ্ডা
  • শেরপুরের ছানার পায়েস
  • ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ
  • গোপালগঞ্জের রসগোল্লা
  • নওগাঁর নাগ ফজলি আম
এছাড়া আরো যে দুইটি পণ্য আবেদন অবস্থায় রয়েছে সেগুলো হলঃ
  • দিনাজপুরে লিচু
  • টাঙ্গাইলে শাড়ি

কিভাবে জিআই (GI) পণ্যের স্বীকৃতি লাভ করে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেসব প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি এবং কৃষিজাত পণ্য দীর্ঘকাল ধরে উৎপাদন ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে আসছে সেসব পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং এর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উক্ত পণ্যগুলো জিআই (GI) হিসেবে নিবেদিত করে রাখে। এবং পরবর্তীতে তাদের আবেদনের ভিত্তিতে পণ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে তারপরে সে পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জিআই (GI) পণ্যের গুরুত্ব 

কোন পণ্য যখন জিআই (GI) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত পায় তখন সে পণ্যের দেশে বিদেশে কদর বেড়ে যায়। এবং সেটাকে বিশ্বব্যাপী খুব সহজে ব্র্যান্ডিং করা যায়। জিআই (GI) পণ্য হিসাবে স্বীকৃত পাওয়ার পরে উক্ত অঞ্চলে পণ্যটির উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে প্রসার লাভ করে। পণ্যটি সকলের কাছে পরিচিত হয়ে যায়। এতে অর্থনৈতিকভাবে বাণিজ্য কিছুটা প্রসার লাভ করে।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url