প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

অন্যান্য সব রোগের মত প্রস্রাবের ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার একটি পরিচিত রোগ। অনেকেই আছেন যারা প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারনে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কি জানি কি হয় এই ভেবে। নারী পুরুষ উভয়েই প্রস্রাবে ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে। আপনি যদি প্রস্রাবে ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অল্পতেই যদি প্রস্রাবের ইনফেকশন ধরা পড়ে তাহলে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার করা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রস্রাবে ইনফরমেশনের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকারসমূহ ।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কেন করে

প্রথমেই আমরা প্রসাবে জ্বালাপোড়া কেন করে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমবেশি অনেকেরই হয়ে থাকে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কেন করে জানেন?? যারা প্রচুর পরিশ্রম করে, টানা রোদের মধ্যে কাজ করে, কম পানি পান করে ইত্যাদি আরো বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করতে পারে।
তবে মজার বিষয় কি জানেন?? প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া এটা কোন রোগ না। এটা হল রোগের লক্ষণ। আবার অতিরিক্ত প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করলে মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে। নারী পুরুষ উভয়েই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সমস্যায় ভুগতে পারে। পুরুষদের চাইতে নারীরা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।


পুরুষদের চাইতে যেহেতু নারীরা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ায়, প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকারে বেশি ভোগেন সেজন্য মেয়েদেরকে বেশ সচেতন থাকতে হয়। জরায়ু মুখের প্রদাহ, জরায়ু সঠিক ভাবে পরিষ্কার না করলে, জরায়ু ঘেমে, ভিজে, চিপচিপা হয়ে থাকলে সেখানে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে।

ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধার কারণে জ্বালাপোড়া করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন কসমেটিক, পারফিউম, ছোট এবং চাপা কাপর, সাবান, মাসিকের প্যাড এসব ছাড়াও বিভিন্ন পদার্থ এবং এলার্জির কারণেও প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে। অনেক সময় তল পেট ব্যথা, মাসিকের কারণেও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে।

অনেক সময় আমরা নিজেরাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার জন্য দায়ী। যেমন পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার না করা, ভালোভাবে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার না করা, বিভিন্ন কসমেটিকস ব্যবহার করা ইত্যাদি। অনেক সময় অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফলে সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করলে করনীয় কি

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করলে করণীয় কি বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করলে কি করবেন এখন আমরা সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। পুরুষ, মহিলা, শিশু, বয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ায় ভুগতে পারেন। আমাদের সকলের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করলে করণীয় কি এই বিষয়টি জানা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
পানি পান করাঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে পানি পানের কোন বিকল্প নাই। পানি পান করার আগে ভাল ভাবে দেখে নিতে হবে আমরা যে পানি পান করছি সে পানি বিশুদ্ধ কিনা। পানি যদি বিশুদ্ধ না হয় তাহলে সেটি আমাদের শরীরে নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেজন্য বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।


প্রস্রাবের সংক্রামন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদেরকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করাঃ শাকসবজি আমাদের শরীরকে নরম করতে সাহায্য করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে বাঁচতে শাকসবজি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এবং সাথে সাথে প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার, প্রসবের জ্বালাপোড়া এসব থেকেও রক্ষা করে।

দই খাওয়াঃ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এরকম অনেক ব্যাকটেরিয়া দইয়ের মধ্যে রয়েছে। এসব ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের পিএইচের মাত্রা রক্ষা করে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে দই সাহায্য করে। প্রস্রাবের অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য প্রতিদিন ২-৫ কাপ দই খেতে পারেন।


তরল জাতীয় খাবারঃ বেশি বেশি পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীর থেকে দূষিত ব্যাকটেরিয়া গুলো মূত্র আকারে বাহিরে বেরিয়ে আসে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য তরল খাবার হিসেবে জুস, পাকা ফলমূল, স্যালাইন খেতে হবে।

হালকাভাবে গরমের ভাপ দেওয়াঃ প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বেশি হলে কাপড় গরম করে সেই গরম কাপড়কে তলপেটে উপর হালকা রেখে ভাব দিতে হবে। তাহলে ব্লাডারের উপরে চাপ কমে এবং ব্যথা কমে যাবে। প্রয়োজনে হিট প্যাড ব্যবহার করতে পারে।

সঙ্গীর সাথে মেলামেশাঃ সঙ্গীর সাথে মেলামেশার আগে আপনাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে আপনার সঙ্গীর প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে অবশ্যই নিয়ম মেনে তারপর সঙ্গীর সাথে মেলামেশা করতে হবে। তা না হলে আপনার সঙ্গীর সাথে সাথে আপনারও প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ওষুধের উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয়াঃ অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। সেজন্য ওষুধ খাওয়ার আগে আমাদেরকে বুঝেশুনে তারপর খেতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার ফলে প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া এবং ইনফেকশন হয়।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

আমাদের শরীরের ভিতরে অনেক ক্ষতিকর বর্জ্য থাকে। এসব বর্জ্যগুলোকে পানি মূত্র আকারে বাইরে বের করে দেয়। আমাদের শরীরে দুটি কিডনি রয়েছে। এই কিডনি দুটির কাজ হল শরীরের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ গুলোকে ফিল্টারিং এর মাধ্যমে মূত্রথলিতে জমা করা এবং এর মাধ্যমে থলি থেকে পরবর্তীতে মুত্রনালীর মাধ্যমে পদার্থগুলো বাইরে বের করে দেয়া।


প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার জানা আমাদের জন্য জুরুরি। যখন কিডনি, মূত্রনালী বা মূত্রথলিতে ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ এবং লক্ষণ দেখা যায়। প্রস্রাবে ইনফেকশনের বেশ কয়েকটি কারণ ও লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলঃ
  • প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করা।
  • শারীরিক পরিশ্রম করা
  • প্রস্রাবের পর ভালোভাবে পানি দিয়ে প্রস্রাবের রাস্তা পরিষ্কার না করা।
  • প্রস্রাবের বেগকে বাধা প্রদান করলে।
  • যৌনাঙ্গ সবসময় ভিজে থাকলে।
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা এবংতা চাপিয়ে রাখা।
  • রাত্রে ঘুমাতে গেলে একটু পরপর প্রস্রাব হয়।
  • প্রস্রাবের রং পরিবর্তন এবং গন্ধ যুক্ত হওয়া।
  • তলপেট ব্যথা করা।
  • অনেক সময় প্রস্রাবে রক্ত বের হওয়া।
  • শরীরে গরম লাগা, জ্বর আসা অনেক সময় শরীরের কাঁপনি লাগা।
  • পাঁজরের নিচের অংশে ব্যথা করা।
  • অনেক সময় বমি বমি ভাব এবং শরীর অনেক ক্লান্তি আসে।
যেকোনো বয়সের নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলোর কিছুটা কম বেশি ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ

আমাদের পায়ুপথ এবং মূত্রনালী প্রায় পাশাপাশি জায়গায় অবস্থান করে। এ কারনে প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ ও প্রতিকার সতর্কতার সাথে করতে হয়। কাজেই প্রস্রাবের পর যদি আমরা ভালো মতো প্রস্রাবে রাস্তা টিস্যু বা পানি দিয়ে পরিষ্কার না করি তাহলে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, ব্যাকটেরিয়ার সহ অন্যান্য রোগ জীবাণু সহজে বাসা বাঁধতে পারে এবং প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।


তাছাড়া প্রস্রাবে ইনফেকশনের আরেকটি কারণ হলো মলত্যাগের পর ভালভাবে মলদ্বার পরিষ্কার না করা। মলদ্বারে অনেক রকম ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো খুব সহজে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে। ছেলেদের চাইতে মেয়েরা প্রস্রাবের ইনফেকশনের বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তার কারণ হচ্ছে মেয়েদের পায়ুপথ ও মলদ্বার কাছাকাছি জায়গায় থাকে।


পুরুষদের চাইতে মেয়েদের মূত্রনালী আকারে কিছুটা বড়। ব্যাকটেরিয়া পায়ুপথ থেকে মূত্রনালীতে প্রবেশ করে প্রস্রাবে সংক্রমণ ঘটায়।

যেসব কারণে প্রস্রাবে ইনফেকশন বেড়ে যায়
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে।
  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুকনো না রাখলে।
  • প্রস্রাবের বেগকে বাধা প্রদান করলে সেটি আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ি তোলে।
  • প্রস্রাবের রাস্তায় বা যৌনাঙ্গে যদি নল বা ক্যাথেটার পড়ানো থাকে।
  • আগে যদি প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় আমরা তাড়াহুড়া করে মূত্রথলি সম্পূর্ণরূপে খালি না করি উঠে পড়ি। এরকমটা করলে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা স্নায়ুতন্ত্রের যেকোনো ধরনের অসুখ হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যায়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে।
  • যদি চিরতরে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তখন ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায় এবং প্রস্রাবে মাত্রা বেড়ে যায়।

আর পড়ুনঃ এলার্জি হলে করণীয় কি? এবং এলার্জি থেকে বাঁচার উপায়

প্রস্রাবে ইনফেকশনের প্রতিকার 

  • সুতি, নরম এবং ঢিলে ঢালা কাপড় পরিধান করে।
  • যৌনাঙ্গ শুকনো রাখা।
  • বেশি বেশি পানি পান করা।
  • প্রস্রাব করার সময় সম্পূর্ণ রূপে মূত্রথলি ফাঁকা করা।
  • ১-৩ বয়সী শিশুদের ডায়পার দেখে দেখে পরিবর্তন করা।
  • সহবাসের আগে এবং পরে প্রস্রাব করা।
  • পুকুরে এবং বাথট্যাবে গোসল না করে বালতি বা ঝর্নার পানিতে গোসল করার অভ্যাস করা।
  • নিয়মিত যৌনাঙ্গপরিষ্কার করা।

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন করে

প্রস্রাব মূলত মূত্রথলিতে জমা থাকে। মূত্রথলিতে জমা থাকার কারণে সেখানে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু বেড়ে ওঠে এবং সংক্রমণ করার সুযোগ পায়। পুরুষদের প্রটেস্ট গ্রন্থি যদি বড় হয়ে যায় বা মূত্রনালির নিচের দিকে পাথর বা টিউমার জাতীয় কোন কিছু থাকে তখন প্রস্রাব করার পরেও কিছুটা থেকে যায়,এতখন পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে, যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে।
অনেক সময় আমরা প্রস্রাব করার সময় হঠাৎ করে প্রস্রাব বন্ধ করে দেই। তখন প্রচন্ড ব্যথা এবং যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এবং আমাদের মূত্রথলি ও বেশ বাধার সম্মুখীন হয়। এছাড়া প্রস্রাবের রাস্তায় নল বা ক্যাথেটার ব্যবহার করলে পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করতে পারে। স্নায়ু গত সমস্যা, অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস, ডায়াবেটিস সমস্যা কারণে প্রস্রাবে ইনফেকশন এবং প্রস্রাবে রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে।


ইউরিনারি ট্রাঙ্কের মাধ্যমে যে সংক্রমণ হয় সেই সংক্রমণকে বলা হয় ইউরিনারি ট্রাঙ্ক। এক্ষেত্রে বারবার প্রস্রাব চাপ আসতে পারে, সেইসঙ্গে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে রক্ত ইত্যাদি একাধিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য যেসব বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত

ডায়াবেটিসঃ বারবার প্রস্রাব করা এটা হল ডায়াবেটিসের মূল কারণ বা লক্ষণ। এক্ষেত্রে দুই ধরনের ডায়াবেটিস লক্ষ্য করা যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শরীরের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজগুলো মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাহিরে বের করে দেয় সেজন্য বারবার প্রস্রাব পায়। সেজন্য নিয়মিত রক্তে সুগার টেস্ট করে নেয়া উচিত।

পোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাঃ  প্রটেস্ট গ্ল্যান্ড পুরুষদের তলপেটের নিচে রয়েছে। এই গ্ল্যান্ডের মধ্যে কিছু তরল তৈরি হয় যা ইজাকুলেশনের সময় বেরিয়ে আসে। কোন কারনে যদি এই অঙ্গটির আকার বেড়ে যায় বা যদি টিউমার হয় তাহলে ইউরিনারি সিস্টেমের উপর বারবার চাপ পড়ে। তখন বারবার প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে। এমনটি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অতিরিক্ত কফিঃ নিয়মিত কফির খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি পরিবর্তন করতে হবে। কফিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেটার কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে, এবং বারবার প্রস্রাব পায়।

অ্যালকোহল বা মদঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ খেলে আমাদের মূত্রনালী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেই সাথে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে। কাজেই অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

অতিরিক্ত ওষুধ সেবনঃ এমন কিছু ওষুধ আছে যেগুলো খেলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি এবং লবণ বের করে দেয় এবং শরীরকে শুষ্ক করে ফেলে। বারবার প্রস্রাব এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে।

মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন করে

পুরুষদের মত মেয়েদেরও মূত্র থলি থাকে। মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করার একটা কারন হল ঠিক মতো পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ ভাল মতো পরিষ্কার না করা। আমাদের শরীরের সমস্ত অপসারিত বর্জ্য মূত্র আকারে থলিতে জমা হয়।

এই থলিতে যখন অতিরিক্ত ভাবে অপসারিত বর্জগুলো জমা থাকে তখন সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে এবং আক্রমণ করার সুযোগ পায়। মূত্রথলিতে টিউমার বা পাথর হয়ে থাকলে তখন প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবে বাধা প্রাপ্ত হয়। এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে।

মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য যা করা উচিত

অনিয়ন্তিত যৌন অভ্যাসঃ মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করার একটি অন্যতম কারণ হলো অনিয়ন্তিত যৌন অভ্যাস। অতিরিক্ত যৌন উত্তেজনায় উত্তেজিত হওয়া, সঙ্গম করা এসবের মাত্রা যতটা সম্ভব কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। অতিরিক্ত সঙ্গম করার ফলে যৌনাঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

এ ছাড়া যৌনাঙ্গের পিচ্ছিল তরল পদার্থ বারবার বের হওয়ার ফলে প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার থেকে বাঁচার জন্য এই অভ্যাসটি কমিয়ে আনতে হবে।

যৌনাঙ্গ নিয়মিত পরিষ্কার করাঃ আমাদের শরীরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। এই জায়গাটা সবসময় কাপড়ে ঢাকা থাকে। কাপড়ে ঢেকে থাকার কারণে অনেক সময় আমাদের শরীর এবং যৌনাঙ্গের জায়গাটা ঘেমে যায়। ঘেমে যাওয়ার কারণে ওই জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে।

সেজন্য প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার থেকে বাঁচার জন্য আমাদের নিয়মিত যৌনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। এমন কোন কিছু দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না যাতে আমাদের সমস্যাটা আরো বেড়ে যায়। কাজেই নিয়মিত যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। মেয়েদের প্রস্রাবে রাস্তার জ্বালাপোড়া করার আরো একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি।

আরামদায়ক কাপড় পড়াঃ অনেকেই আছেন যারা ছোট ছোট এবং অনেক টাইট ফিটিং কাপড় পড়ে থাকেন। এসব টাইট ফিটিং কাপড় পড়ার কারণে যৌনাঙ্গের জায়গাটা অস্বস্তির এবং ক্ষতির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। সেজন্য নরম, সুতির, এবং আরামদায়ক কাপড় পরা উচিত।

কসমেটিক্স ব্যবহার না করাঃ অনেকে আছেন যারা যৌনাঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর রাখার জন্য বাজারের অনেক ক্রিম ব্যবহার করে। এসব ক্রিমের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেও মেয়েদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে। প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার থেকে বাঁচার জন্য কসমেটিক্স ব্যবহার না করাই ভাল।

পিরিয়ডের সময়ঃ পিরিয়ডের সময় সবসময় নরম এবং আরামদায়ক কাপড় পরিধান করা উচিত। তা না হলে পিরিয়ডের রোগ জীবাণু থেকে যৌনাঙ্গেও খুব সহজেই রোগ জীবাণু বিস্তার লাভ করবে। সেজন্য পিরিয়ডের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তা না হলে যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বেড়ে যেতে পারে।

ওষুধ সেবনঃ যেসব ঔষধ খেলে মেয়েদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে সেসব ঔষধ পরিহার করা উচিত।

অ্যালকোহল বা মদঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ খেলে আমাদের মূত্রনালী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেই সাথে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে। কাজেই অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

বেশি বেশি পানি পান করার অভ্যাস রাখতে হবে। আমরা পানি যত বেশি পান করব শরীর থেকে দূষিত পদার্থ তত তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবে। সেজন্য আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশি বেশি পানি পানের কোনো বিকল্প নাই।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করা ওষুধের নাম

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করা এটি খুবই কমন এবং পরিচিত একটি সমস্যা। যদি মাঝে মাঝে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে তাহলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রাথমিকভাবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ভালো হয়ে যায়। সামান্য একটু ব্যথায় বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ায় ওষুধ খাবেন না। ওষুধ যত কম খাবেন ততই আপনার শরীরের জন্য ভালো।

সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার পানি পান করতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে কচি ডাব, ফলমূল, জুস, আখের রস, শরবত, মিশ্রীদানা ইত্যাদি এইসব খাবার খান। প্রয়োজন না থাকলে রোদ্রের মধ্যে বাইরে চলাফেরা, পরিশ্রম করা বাদ দিন। মূলত প্রস্রাবে যখন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে তখন প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে।

কিডনিতে পাথর হলে ঠিকভাবে প্রস্রাব নিঃসরণ হতে না পারলে তখন প্রস্রাবের রাস্তায় প্রচুর জ্বালাপোড়া করে। যদি কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিডনিতে পাথর হলে বেশ কয়েকটি ওষুধ আছে যেগুলো খেলে পাথর গলে যায়। তার মধ্যে শসা একটি অন্যতম। যত বেশি শসা খাবেন তত তাড়াতাড়ি আপনার কিডনি থেকে পাথর গলে যাবে।

কিন্তু যদি বারবার প্রস্রাবে রাস্তায় জ্বালাপোড়া করে তাহলে অবশ্যই দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালা পোড়া রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url