মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় এবং করণীয়

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় অনেকেই জানেন না। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে। কাজের প্রতি জোশ আসে। মনের মধ্যে এক অন্যরকম শান্তি বিরাজ করে। আজ আমরা আলোচনা করব মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় এবং করণীয় সম্পর্কে।
যারা মানসিকভাবে অসুস্থ, মানসিক শান্তিতে থাকতে চান কিন্তু পারছেন না তাহলে হতে পারে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় এবং করনীয় সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতার কোন বিকল্প নেই।

মানসিক সুস্থতা কেন প্রয়োজন

সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন সবাই চায়। ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সুন্দর জীবনযাপনের কোন কোন বিকল্প নাই। মানসিক ভাবে সুস্থতা আপনাকে সজীব এবং প্রাণবন্ত করে তোলে। আমাদের চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, সুন্দর চিন্তা ধারা, বন্ধু সুলভ আচারন এবং অনেক সময় ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

যদি মনের স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে শরীর ও ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে যায়। শরীর অসুখ হলে সেটা বুঝতে পারা যায় কিন্তু যদি মনে অসুখ হয় তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ?? চলুন আজ আমরা জেনে নেই মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় এবং করণীয়। 

মানসিক অসুস্থতা কাকে বলে

মানসিক অসুস্থতা হচ্ছে মনের একটা রোগ। যেটা বোঝা যায় না দেখা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার বিষয়টি সবার জানা। মানসিক অসুস্থতা বলতে আমরা কি জানি?? এবং এ থেকে সুস্থ হওয়ার উপায় বা কি!!! মানসিক অসুস্থতা মানুষকে মনের দিক থেকে দিন দিন বিষাদময় করে তোলে।

দীর্ঘদিন ধরে যদি কোন ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা ভুগেন তাহলে তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারেন। মনকে ভালো রাখতে হলে বা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে আমাদেরকে সেসব কাজ করতে হবে, যে কাজগুলো করলে মনের দিক থেকে শান্তি এবং হাসি খুশি থাকতে পারবো।


মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ

মানসিক অসুস্থতার বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। যেমনঃ
  • মনমরা বা চুপ হয়ে বসে থাকা।
  • কোন কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
  • অল্পতেই নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলা।
  • কারণে-অকারণে রেগে যাওয়া।
  • কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • নতুন এবং পুরাতন কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • কাজের প্রতি ভুল বাড়তেই থাকে।
  • ছোট এবং সহজ কাজকে অনেক বড় এবং কঠিন মনে হয়।
  • ঠিকমতো ঘুম খাওয়া ইত্যাদিতে স্বাভাবিকভাবে অবসাদ এবং ক্লান্ত জড়িয়ে পড়ে।
  • অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া।
  • নিজেকে মূল্যহীন ভাবা।

আমাদের মধ্যে যদি উক্ত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ধীরে ধীরে শরীর ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীরের পাশাপাশি মনকে সুস্থ রাখতে হবে। এজন্য মনের প্রতিও আমাদের যত্নশীল হতে হবে। মন সুস্থ থাকলে শরীর সুস্থ আর শরীর সুস্থ থাকলে আমরাও সুস্থ।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় এবং করণীয়

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শরীরের পাশাপাশি মনেরও যত্ন নিতে হয় সেটা সবারই জানা। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এতে করে ফুরফুরে মন বিরাজ করে। একটি চাপ হীন সুখী জীবন যাপনের জন্য মানসিক সুস্থতার কোন বিকল্প নাই। মানুষিক সুস্থতা আমাদেরকে যেকোনো কাজের প্রতি বাড়তি আগ্রহ প্রকাশ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্যায়াম, খেলাধুলা,  ভ্রমণ করলেও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। সুস্থ থাকতে হলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলোঃ  

মনকে স্থির রাখার জন্য মেডিটেশনঃ
মেডিটেশন এমন একটি ব্যায়াম যেটা মনকে নমনীয় মানসিক চাপ আত্মসচেতনতা বোধ, মনোযোগ ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন কয়েক মিনিট মনোযোগ সহকারে এই ব্যায়াম করতে হবে তাহলে আমাদের মন ভালো থাকবে।


শরীরচর্চা বা ব্যায়ামঃ
শরীর চর্চা করলে আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে এ ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। মস্তিষ্ক ভালো থাকে। ব্যায়াম করলে এনডোরফিল নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসরন হয় এতে মন আরো প্রফুল্ল থাকে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমঃ
ঘুম হচ্ছে একটি কার্যকরী পন্থা। ঠিকমতো ঘুম না হলে কাজে কর্মে মন বসে না। শরীর ঝিম মেরে থাকে ঠিক মতো শক্তি আসেনা মানসিক ক্রান্তি এসে ভর করে। মাথা ঘুরানি, মাথাব্যথা ইত্যাদি হতে পারে সারাদিনের কান্তি দূর করতে অবশ্যই ঘুম অনেক জরুরী। প্রতিদিন অন্তত ৮ঘন্টা করে ঘুমাতে হবে। ঠিকমতো ঘুম হলে আমাদের মাইন্ড ফ্রেশ হয়ে যায়। ফলে যে কোন কাজে কর্মে মন বসে। 

বন্ধুদের সাথে মেলামেশাঃ
বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি আড্ডা গান খেলাধুলা বিনোদন ইত্যাদি মানুষের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। আবার সারা দিনের কান্তি জমানো কথা বন্ধুর সাথে শেয়ার করলে মন এমনিতেই অনেকটা হালকা এবং ভালো হয়ে যায়। আপনার মন খারাপ এক নিমিষেই ভালো করে দিতে পারে। গল্প, আড্ড,  গান-বাজনা ইত্যাদিতে আপনি ব্রেইনকে যত বেশি রিফ্রেশ করতে পারবেন আপনার মন তত ভালো এবং চিন্তা মত থাকবে।


নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করাঃ
অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না। প্রতিদিন আপনি কত সময় ইন্টারনেট মোবাইল টিভি ব্যবহার করবেন সেটা আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে। তা না হলে আপনি এগুলো প্রতিদিন আসক্ত হয়ে পড়বেন। প্রয়োজনে বিনোদনের মাধ্যম ইন্টারনেট, মোবাই্‌ টিভি হতে পারে। কিন্তু এগুলো বেশি ব্যবহার করলে আপনি দিন দিন এগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। 

নতুন কিছু শিখার প্রতি আগ্রহঃ
আমরা যখন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি তখন নিজেদের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং সৃজনশীল মনোভাব বিকশিত হয় সৃজনশীল মনোভাব নিত্য নতুন ভাবনার চিন্তার মনভাব বাড়িয়ে তোলে। এতে কাজের প্রতি আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং কাজে আনন্দ অনুভব হয়।

রুটিন মেনে চলাঃ
রুটিন মেনে চলা আমাদেরকে সময়ের অপচয় এবং সময়ের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের কাজ, বিশ্রাম, নিজের পরিচর্যা, বিনোদন এগুলো সবগুলো নির্দিষ্ট সময় ভাগ করে নিতে হবে তাহলে আমাদের সময়ের অপচয় কম হবে। এতে করে প্রতিদিন এর অনিশ্চয়তার সময় কাটিয়ে জীবন ভালো একটা ছন্দ ফিরে পাবে।


মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হওয়াঃ
যখন কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়, বিরক্ত জমে তখন কোথাও থেকে ঘুরে আসলে মনটা অনেক হালকা হয়ে যায় এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বসে। সেজন্য মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া উচিত। এতে মন ভাল থাকে।

চিকিৎসকের শরণাপন্নঃ
যদি মনের দিক থেকে নিজেকে বেসামাল মনে হয়, নিজের প্রতি কন্ট্রোল না থাক্‌ দিন দিন অবনতি হয় সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। অনেক সময় ডাক্তারের মাধ্যমে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

নিজের শরীরের যত্ন নেওয়াঃ
নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করবেন না। মনে রাখবেন আপনার শরীর ঠিক থাকলে মন এমনিতেই ভালো থাকবে। নিয়মিত চুল কাটা, নখ কাটা, দাড়ি কাটা, প্রতিদিন দাঁত পরিষ্কার করা, গোসল করা, কাপড় পরিষ্কার করা ইত্যাদি শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে। অর্থাৎ শরীরের সৌন্দর্য মনের সৌন্দর্যকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়াঃ
সুস্থ সবল দেহের জন্য পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। পুষ্টিকর খাবার দেহের সুষম বৃদ্ধি ঘটায়। শরীরের পুষ্টি সঞ্চয় করে। সুস্থ সবল দেহে সুস্থ সবল মন। শরীরের বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, লৌহ লবং লবণ এগুলোর চাহিদা পূরণের জন্য খাবারের কোন বিকল্প নেই। আমাদের শরীরে যদি সঠিক পুষ্টি থাকে তাহলে আমরা রোগে আক্রান্ত কম হবে। রোগবালাই সহজে এসে শরীরের বাসা বাঁধতে পারবে না।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url