এলার্জি হলে করণীয় কি? এবং এলার্জি থেকে বাঁচার উপায়

এলার্জি হলে করণীয় কি?  এবং আপনি এলার্জি থেকে বাঁচার উপায় সেটি অবশ্যই জানতে চান??  তাহলে আজকের এ পোস্টটি আপনার জন্য। এলার্জি হচ্ছে খুব কমন একটা রোগ। একটু ছোঁয়া দিলেই সেই জায়গা বা শরীর ফুলে ওঠে। চুলকানি শুরু হয় প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে কমবেশি এলার্জি আছে।
এলার্জি হলে করণীয় কি ?? বা কি করলে এলার্জি থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে পাবেন তা আজ আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব। এলার্জি প্রায় সব মানুষের শরীরেই রয়েছে। কমবেশি সবাই এ রোগে ভুগে থাকেন। শিশুদের এলার্জির প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর লক্ষণ সমূহ এবং প্রবণতাও কমতে থাকে। আবার ছোটবেলায় সমস্যা না থাকলেও পরবর্তীতে নতুন করে সমস্যা দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এলার্জি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় এবং এ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন তাহলে আজ সে বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

এলার্জির কারনসমুহ

সর্দি কাশিতে ও অনেক সময় এলার্জি হয়ে থাকে। এতে করে জীবনকে আরো দুর্বিসহ করে তোলে। ধুলাবালিতে ও অ্যালার্জি থাকে। আপনি বাসাবাড়ি পরিষ্কার করছেন বা ধুলাবালি পরিষ্কার করছেন এমন সময় হঠাৎ করে হাঁচি শুরু হয়ে গেল এবং একটু একটু সর্দি এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে আপনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল।
অনেক সময় আমরা ফুলের গন্ধ নেই। গন্ধের মাধ্যমে ও এলার্জি শুরু হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন: গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, গরুর দুধ, মিষ্টি কুমড়া, মসুরের ডাল, পুঁইশাক ইত্যাদি খাওয়ার কারণেও আমাদের এলার্জি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও ধাতব অলংকার, প্রসাধনসামগ্রী, কোনো রাসায়নিক, ডিটারজেন্ট, সাবান, পারফিউম, প্লাস্টিকের তৈরি গ্লাভস বা বস্তু, গাছ, ফুলের রেণু, ওষুধ, সিনথেটিক কাপড় ইত্যাদি আমাদের এলার্জি কারন হয়ে থাকে।


এ সমস্যা জন্মগত ও পারিবারিক কারণে ও হতে পারে। প্রত্যেক মানুষের শরীরে এক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যখন ইমিউন সিস্টেম ব্যবস্থার অনিয়ম হয় তখনই এলার্জির প্রকাশ পায়। আমাদের শরীর সব সময় ক্ষতিকর বস্তুকে ( ছত্রাক, ভাইরাস, পরজীবি এবং ব্যাকটেরিয়া ) প্রতিরোধ করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। 

অনেক সময় আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এরকম বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধ করে থাকে। যখনই এরকম রোগ প্রতিরোধ শুরু করে,তখন শরীরের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলে। 
সাধারণত যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরের এলার্জি দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবার
  • ধুলাবালি
  • গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া
  • ঘাম
  • গৃহপালিত পশু পাখি সংস্পর্শে আসলে
  • ফুলের পরাগ এবং ফুলের রেনু
  • সূর্যের রশ্মি
  • বিভিন্ন ঔষধ
  • ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া
  • কীটনাশক
  • ডিটারজেন্ট বা রাসায়নিক পদার্থ
  • মানসিক চাপ।

কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে

সচরাচর যেসব খাবার খেলে এলার্জি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছেঃ 
  • চিংড়ি
  • গরুর মাংস
  • ডাল
  • বেগুন
  • ইলিশ
  • বাদা
  • পুঁইশাক
  • মিষ্টি কুমড়া
  • দুধ
  • ডিম
চিনা বাদাম, সেলফিশ, মাছ, গাছ বাদাম, চাল এবং ফল দাড়াও এলার্জি হতে পারে। এছাড়া আরও অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যেগুলো আমাদের এক একজনের শরীরে একেক রকম ভাবে এলার্জি সৃষ্টি করে। আবার অনেক সময় এলার্জি দেশের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। ঝুঁকির কারণগুলি হতে পারে পারিবারিক অ্যালার্জির ইতিহাস, ভিটামিন ডি এর অভাব, স্থূলতা এবং অধিক পরিছন্নতা। এক এক জন মানুষের এলার্জি এক এক রকম খাবার থেকে হতে পারে। 

তাই কোন ধরনের খাবার খেলে এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয় সেই সব বিষয়গুলো মাথায় রেখে খাবার খাওয়া উচিত। খাবারে এলার্জিজনিত সমস্যার কারণ খুঁজে বের করতে পারলে অনেকটাই এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

এলার্জির লক্ষণসমূহ কি কি

বাতাসে অনেক রকমের জীবাণু যেমন ছত্রাক, ভাইরাস, পরজীবি ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ঘুরে বেড়ায়।  শরীর যখন এলার্জিজনিত উপাদানের সংস্পর্শে আসে তখন খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের শরীরে এলার্জির লক্ষণ প্রকাশ পায়।  

লক্ষণগুলো হলোঃ
  • চামড়ায় চুলকানি, ফুসকুড়ি হওয়া।
  • শরীরে কিছু অংশে চাকা হয়ে লাল হয়ে যায়। এবং পরে ফুলে যায়। ফোসকা পরে এবং চামড়া ঝরে যায়।
  • ঠোঁট, জিহ্বা,  চোখ ও মুখ ফুলে যায়।
  • চোখ চুলকায়, চোখ থেকে পানি পড়ে লাল হয় ও ফুলে যায়।
  • শুকনো কাশি, হাঁচি, নাক এবং গলা চুলকায়।
  • শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপা লাগা ব্যথা ও শ্বাস নেওয়ার সময় গো গো শব্দ হয়।
  • নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকা।
  • অনেক সময় বেগুন কাটতে গেলে অ্যালার্জি শুরু হয়।

এলার্জির প্রধান সমস্যা গুলো কি কি

এলার্জি জনিত সর্দিঃ এলার্জির জনিত সর্দি হলে সব সময় হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কখনো কখনো চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।

এলার্জি জনিত সর্দি প্রধানত দুই ধরনেরঃ
  • সিজনাল সর্দি
  • সারা বছর ধরে সর্দি
সিজলান সর্দিঃ বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এ সর্দি হয়। একে সিজনাল সর্দি বলে।
লক্ষণঃ
  • ঘন ঘন হাঁচি পরে।
  • নাক দিয়ে পানি পড়ে।
  • নাক বন্ধ হয়ে যা।
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
  • অনেক সময় চোখে ব্যথা অনুভূত হয়।
সারা বছর ধরে সর্দিঃ সব সময় বা বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে এ সর্দি লেগে থাকে।
লক্ষণঃ
  • এর লক্ষণ ও সিজনাল সর্দির মতোই। কখনো কম হয় আবার কখনো বেশি হয়।
অ্যাজমা বা হাঁপানিঃ এর উপসর্গ হচ্ছে কাশি, শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো বুকের মধ্যে শব্দ হয়, অনেক সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। শিশু এবং মাঝ বয়সীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা দেয়।
লক্ষণঃ
  • শ্বাস নেওয়ার সময় কষ্ট হয়।
  • বুকের ভিতর শো শো শব্দ হয়।
  • ঘনঘন কাশি হয়।
  • ঠিক মতো ঘুমাতে পারে না। অনেক সময় উঠে বসে।
  • যেকোনো সময় দম বন্ধ হয়ে রোগী মারা যেতে পার।
ত্বক বা চামড়ার মধ্যে লাল লাল গুটি হওয়াঃ হঠাৎ করে চুলকানি শুরু হয়। চুলকাতে চুলকাতে চামড়ার মধ্যে ছোট ছোট গুটি হয়ে যায় এবং সেগুলো লাল বর্ণ হয়ে যায়। কখনো কখনো চুলকানি যদি বেশি হয় তাহলে সেটা অনেক বড় বড় হয়ে যায় এবং ত্বক ফুলে যায়। আবার ব্যথা ও অনুভূত হয়। চুলকানির ফলে ত্বকের গুটি  গুলো কয়েক ঘণ্টার স্থায়ী থাকে।  কিন্তু ব্যাথা থেকে যায়। কখনো কখনো বারবার চুলকানি হতে পারে। যে কোন বয়সের লোকদের মধ্যে এর চুলকানি হতে পারে। শিশুদের মধ্যে স্বল্পমাত্রা চুলকানি এবং বড়দের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি দেখা দেয়। 
 

সংস্পর্শ জনিত এলার্জিঃ চামড়ার মধ্যে কোথাও কোথাও শুকনো খসখসে হয়ে যায়। ছোট ছোট দানার মত হয়ে ওঠে। বহিঃস্থ উপাদান বা অ্যালার্জির সংস্পর্শে  আসলে এই এলার্জি শুরু হতে পারে।
 লক্ষণঃ 
  • ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট ফোসকা পড়ে ।
  • ফোসস্কাগুলো গলে যায় এবং সেখান থেকে পানি বের হয়।
  • ত্বকের উপরের আবরণ উঠে যায়।
  • ফোসকা পড়ার জায়গা গুলো লাল হয়ে যায় এবং প্রচন্ড চুলকায়।
একজিমাঃ এটা সাধারণত বংশগত চর্ম রোগ। যার ফলে ত্বক সব সময় শুষ্ক থাকে, আঁশটে এবং লাল হয়ে থাকে। শরীর সবসময় চুলকাতেই থাকে। চুলকানোর ফলে ত্বকের চামড়া শক্ত হয়ে যায় এবং উঠেও যায়। এর ফলে ত্বকের সেসব জায়গা থেকে পানি বের হয় এবং দেখতে ব্রণের মত হয়ে যায়। এতে করে সহজে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু আক্রমণ করতে পারে। এটি বেশিরভাগ সময় মুখে, ঘাড়, হাতে, পায়ে, পিঠে এমন কি পেটেও দেখা যায়।

চোখের  এলার্জিঃ চোখ যখন বেশিরভাগ সময় চুলকাতে থাকে তখন চুলকাতে চুলকাতে এক পর্যায়ে চোখ লাল হয়ে যায়। এরকম শুরু হলে তখন তাকে চোখের এলার্জি বলে।

খাওয়ার এলার্জিঃ খাওয়ার এলার্জির কারণে কখনো কখনো পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং অনেক সময় ডায়রিয়া হতে পারে।

 পার্শ্ব প্রক্রিয়াজনিত এলার্জিঃ এটা খুবই একটা মারাত্মক এলার্জি। ত্বকের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে এটা শুরু হয়ে যায়।
 লক্ষণ সমূহঃ
  •  চামড়া লাল হয়ে ফুলে ওঠে এবং চুলকাতে থাকে।
  •  শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
  •  নিঃশ্বাস নেওয়ার  সময় বাঁশির মতো শব্দ হয়।
  •  রক্ত তাপ কমে যেতে পারে।

এলার্জির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা

রক্ত পরীক্ষাঃ রক্তে ইয়োসিনোফিলের যাত্রা বেশি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পরীক্ষা করে দেখার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বাবস্থা ব্যবস্থা নিতে হবে।

সিরাম আইজিইর মাত্রাঃ যারা এলার্জি রোগী তাদের ক্ষেত্রে এই সিরাম আইজিইর মাত্রা বেশি থাকে।  এই সিরাম আইজিইর মাত্রা পরীক্ষা করে দেখার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বাবস্থা ব্যবস্থা নিতে হবে। 

স্কিন প্রিক টেস্টঃ চামড়ার ওপর বিভিন্ন এলার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কোন কোন জিনিসের রোগীর অ্যালার্জি আছে তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে যানা যায়। 

প্যাচ টেস্টঃ এই পরীক্ষার ও চামড়ার উপরে করা হয়। এলার্জি যেহেতু চামড়ার উপরের দিক থেকে শুরু হয় সেহেতু এই পরীক্ষা করা অতীব জরুরী।

বুকের এক্সরেঃ শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণেও হতে পারে তাই যারা হাঁপানি রোগী তাদের  চিকিৎসা শুরু করার আগে বুকে এক্সরে করে দেখা হয়।

ফুসফুসের ক্ষমতা দেখাঃ রোগীর ফুসফুসের ক্ষমতা ঠিক আছে কিনা সেটা দেখার জন্য পরীক্ষা করা হয়। 

এলার্জি প্রাথমিক চিকিৎসা

এলারজেন পরিহার করাঃ যখন এলার্জির নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তখন এর চিকিৎসা করা ও  সহজ হয়। এবং তখন সেগুলো পরিহার করে চললে সহজ উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ  করা যায়।

ওষুধ বা মলম ব্যবহার করাঃ যখন এলার্জি শুরু হয় তখন ওষুধ এবং অনেক সময় মলম ব্যবহার করে আরাম পাওয়া যায়।

এলার্জির ভ্যাকসিনঃ এলার্জির মাত্রা ভেদে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। যখন ওষুধে কাজ করে তখন ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। 

অনেকে মনে করেন এলার্জি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে এলার্জি অনেকটাই ভালো করা সম্ভব। প্রথম দিকে যদি অ্যালার্জি ধরা পড়ে তাহলে সেটা পুরোপুরি ভাবে নিমূল করা সম্ভব। ছোট বলে এ রোগকে কখনো অবহেলা করা যাবে না।

অবহেলা কারণে এ রোগ অনেক সময় অনেক কঠিন আকার ধারণ করে এবং নির্মূল করা প্রায় কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। সচেতন হলে যেকোনো রোগ খুব সহজে মোকাবেলা করতে পারব। 

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url