৬ থেকে দেড় বছর বয়সী শিশুদের খাবার তালিকা
৬ থেকে দেড় বছর বয়সী শিশুদের খাবার তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখতে হবে যাতে তাদের দ্রুত মানসিক এবং শারীরিকবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একটি শিশু জন্মের পর থেকে তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারের কোন বিকল্প নেই। এ সময় তাদের ক্ষুধা ও বাড়তে থাকে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি তাদের পুষ্টিকর খাওয়া সরবরাহ করতে হবে। আজ আমরা আলোচনা করব ৬ থেকে দেড় বছর বয়সী শিশুদের খাবার তালিকা সম্পর্কে।
৬ থেকে দেড় বছর বয়সী শিশুদের খাওয়ার তালিকায় কিছু কিছু পুষ্টিকর ফল ও রাখতে হবে। যেমনঃ আপেল, কমলা, বেদেনা, ডালিম,কলা, খেজুর, আঙ্গুর ফল, বিভিন্ন সিজনাল ফলমূল ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। আপনার বাসায় যদি ছোট শিশু থাকে তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি মূল্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়বেন।
জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে কোন খাবারগুলো খাওয়ানো উচিত
একটি শিশু জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এসময় শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধের সবচেয়ে বেশি জরুরী। এ সময় শিশুকে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা। যায় ৪ মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি তরল কিছু খাবার খেয়ে থাকে।
এ সময় ভাতের মাড়, সুজি, ইত্যাদি অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। ভাতের মাড়ে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে থাকে।
৬ মাস পর শিশুকে কোন খাবার গুলো খাওয়াতে হবে
শিশুর বয়স যখন ৬ মাস হবে তখন তার ক্ষুধা এবং খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। তখন মায়ের দুধের পাশাপাশি সুষম, তরল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স ৬ মাস পর থেকে পুষ্টিকর খিচুড়ি খাওয়াতে হবে। খিচুড়িতে শাকসবজি, গাজর, ডাল, টমেটো, আলু এসব দিয়ে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে হবে।
খিচুড়ি স্বাদ বাড়ানোর জন্য সামান্য পরিমাণ লবণ এবং অল্প পরিমাণ মরিচের গুড়া দিতে হবে। খিচুড়ি খাওয়ার পর শিশু যদি কান্নাকাটি শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে খিচুড়িতে ঝাল বেশি হয়েছে। সেক্ষেত্রে খিচুড়ি রান্নার সময় ঝাল না দেওয়াই ভালো। এছাড়া বিভিন্ন পুষ্টিকর ফলমূল,গরুর কলিজা,খাসির কলিজা, মুরগির কলিজা, ডিমের কুসুম প্রতিদিন অল্প অল্প করে খাবারের মেনুতে কিছু না কিছু রাখতে হবে।
তরল খাওয়া হিসেবে ভাতের মাড়, সুজি, বার্লি খাওয়ানো যেতে পারে। ভাতের মাড় যখন একটু একটু গাঢ় হয়ে যায় তখন খাওয়াতে হবে। ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। যা শিশুর শারীরিক বিকাশে অনেক জরুরী। শিশু যতই বড় হতে থাকে তার খাবারের চাহিদা ততই বাড়তে থাকে।
শিশুর যেটুকু খাবার প্রয়োজন কেবল ততটুকুই খাবার খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনের চাইতে বেশি খাওয়ানোর কারণে অনেক সময় শিশুর বদহজম হতে পারে, মুখে অরুচি হতে পারে, খাবারের প্রতি অনীহা বাড়তে পারে। অনেক সময় আবার শিশু খেতে ও চায় না। সেজন্য খাওয়ানোর বিষয় একটু নজর রাখতে হবে। খাওয়ানোর সময় সাথে পানি রাখতে হবে। খাবার গ্রহণের সময় শিশু পানি খায়। ৬ থেকে ১২ মাস বয়সে শিশুর বিকাশ অতি দ্রুত ঘটে।
১ বছর বয়সী শিশুর খাবার তালিকা
১টি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একটি শিশুকে সুস্থ, সুন্দর, সবল ভাবে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর খাবারের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া উচিত। ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে শিশুর দাঁত বের হতে শুরু করে। এ সময় খাবার জিনিসকে তারা কামড়ে খেতে পারে। তারা নিজে ধীরে ধীরে খেতে শুরু করে।
শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি অতি দ্রুত ঘটতে থাকে। সুস্থ সবল হয়ে বিকশিত হতে পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অনেক রয়েছে। শিশুর বয়স যখন ১ বছর হয়ে যাবে তখন কম বেশি সব ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে। যেকোনো একটা খাবারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে মিশ্র খাবারের একটা মেনু তৈরি করতে হবে।
শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। হরলিক্স দেওয়া যেতে পারে। খাবার খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে কোন খাবার শিশু বেশি খাচ্ছে বা ভাল খাচ্ছে আগ্রহ দেখাচ্ছে সে খাওয়ার গুলো বেশি করে খাওয়াতে হয়। খাবারের পরিমাণ অল্প অল্প করে বাড়াতে হবে। খাবারটি নরম হতে হবে।
পরিপাক যোগ্য এবং কম মসলাযুক্ত হতে হবে আর নজর রাখতে হবে খাবারটি যেন সুস্বাদু হয়। ৬ থেকে ১ বছরের মধ্যে শিশুর জিহব্বার টেস্ট ব্লাড তৈরি হয় এবং শিশু তখন বুঝতে পারে কোন খাবারে কেমন স্বাদ। বিভিন্ন খাবারের প্রতি শিশুর অনিহা প্রকাশ করে আবার অনেক খাবারের উপর শিশুর আগ্রহ প্রকাশ করে।
শিশুকে এমনভাবে খাওয়ানো যাবে না যাতে শিশুর বদ হজম হয়। প্রথম প্রথম তরল খাবার খাওয়াতে হবে যাতে শিশুর হজমের কোন ক্ষতি না হয়। অ্যালার্জিজনিত খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে প্রথম খাবার খাওয়ানোর সময় একটু ধৈর্য সহকারে খাবার খাওয়াতে হবে কোনভাবে জোর করা যাবে না তাহলে শিশুর খাবার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।
আর পড়ুনঃ মাথার চুল পড়ার কারন ও এর প্রতিকার
১ থেকে দেড় বছর শিশুর খাবার টেবিল
বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, হরলিক্স ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পুষ্টি রয়েছে। এসব খাবারগুলো শিডিউল করে খাওয়াতে হবে। বাচ্চাদের খাবারের শস্যজাত খাবার যেমন ডাল বীজজাতীয় খাবার ইত্যাদি রাখতে হবে। ডাল জাতীয় খাবার খেলে দেহে বল এবং বৃদ্ধি ঘটে। খাবার রান্না করার সময় অবশ্যই অল্প পরিমাণ তেল লবণ ব্যবহার করতে হবে।
হাড়ের সুষ্ঠু গঠনের জন্য তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুর বয়স যখন দেড় বছর হয়ে যায় তখন সে সব ধরনের খাবার পারে। মায়ের বুকের দুধ যত দিন পর্যন্ত সম্ভব ততদিন পর্যন্ত খাওয়াতে হবে। বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুর চাহিদা দেখে খাবার দিতে হবে। এমন কোন খাবার দেওয়া যাবে না যে খাবার খেতে গেলে শিশুর দাঁতে আঘাত পায়।একান্ত শক্ত কোন খাবার হলে সেটা চিবিয়ে নরম করে খাওয়াতে হবে। যেমন পেয়ারা।
শিশুরা অনেক সময় কুটুর কুটুর শব্দ করে খেতে ভালোবাসে। ১ থেকে দেড় বছর বয়সী শিশুরা সব ধরনের খাবার খাওয়া শিখে যায় এ সময় শিশুরা একটু একটু করে হাটতে শিখে। শিশুর মস্তিষ্ক বিকশিত হতে থাকে। গরুর মাংস, গরুর কলিজা, খাসির মাংস, খাসির কলিজা, মুরগির মাংস, মুরগির কলিজা, মাছের কলিজা, আলু এগুলো বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে। মস্তিষ্ক বিকাশে এসব খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর খাদ্য কেমন হওয়া উচিত
দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি অতি দ্রুত ঘটতে থাকে। এ সময় তাদের মুখে পরিপূর্ণ কথা ফুটে এবং হাঁটতে পারে তখন তারা হাটাহাটি করে। হাটাহাটির কারণে শরীরে পুষ্টি ক্ষয় হয়। এ ক্ষয়কৃত পুষ্টি আবার সঠিকভাবে আমাদের সরবরাহ করতে হবে। সঠিকভাবে পুষ্টি সরবরাহ না করা হলে শরীরে পুষ্টি ঘাটতে পড়তে পারে।
শিশুরা যখন খাবার চাইবে তখনই খাবার দিতে হবে। কখনো কখনো শিশুরা খেতে না চাইলেও তাদের লোভ দেখিয়ে খাওয়াতে হবে। শিশু যখন ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে তখন সে খাবারগুলোকে নিজের হাতে খাওয়ার চেষ্টা করে। শরীরের সঠিক বল, হাড় শক্ত হওয়ার জন্য হরলিক্স ভিটামিন মিনারেল সরবরাহ করতে হবে। শিশুদের হরলিক্সে প্রায় সব ধরনের উপাদানই রয়েছে। নিয়মিত হরলিক্সের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
কিভাবে বুঝবেন শিশুর ক্ষুধা লেগেছে
এতক্ষণ আমরা শিশুর পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এখন আমরা আলোচনা করব শিশুর ক্ষুধা লাগার বিষয়ে। অনেক সময় শিশু কান্না করে। আমরা অনেক সময় অনেক চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারি না। অনেকে কান্না করার কারণটাও জানতে পারেন না।
শিশু যখন ক্ষুধা লাগে তখন শিশু কান্না করে। শিশু যেহেতু কথা বলতে পারেনা তাই তারা কান্নার মাধ্যমে তাদের ক্ষুধাটাকে প্রকাশ করে। সেজন্য যখন শিশু কান্নার করবে তখন ধরে নিতে হবে শিশুর ক্ষুদা লেগেছে। কান্না করলে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারের প্রতি অভ্যাস করাতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url