দাঁত ব্যাথা কেন করে?? দাঁতের ব্যথা থেকে বাঁচার সহজ উপায়

দাঁতের ব্যথা এমন একটা সাংঘাতিক ব্যথা যেটা মানুষকে হাড় ভাঙা সমান যন্ত্র এবং কষ্ট দেয়। কমবেশি সবাই এই দাঁতের ব্যথা এবং যন্ত্রণা ভোগ করে। আজ আমরা আলোচনা করব দাঁতের ব্যথা কেন, এবং এই দাঁতের ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় কি। দাঁত ব্যথার কারণ এবং দাঁতের ব্যথা থেকে বাঁচার উপায় জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

দাঁত আমাদের শরীরের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ

দাঁত না থাকলে আমরা খাওয়ার চিবিয়ে খেতে পারব না। আবার আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন দাঁত না থাকলে আমরা ঠিক মত কথাও বলতে পারব না। শরীরের সৌন্দর্য বহনের দাঁত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উজ্জল এবং চাকচিক্যময় একটি সুন্দর দাঁত কে না চাই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের 32 টি করে দাঁত থাকে কখনো কখনো এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। কার ক্ষেত্রে ৩৩ আর ৩৪টি ও দাঁত থাকে। দাঁতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-

  • উপরে মাড়ির চোয়াল এবং
  • নিচের মাড়ির চোয়াল।
প্রতিটি চোয়ালে ১৪ থেকে ১৬ টি করে দাঁত থাকে। ১৮ বছর পর থেকে আক্কেল দাঁত বের হওয়া শুরু হয়। যদি আমাদের দাঁত না থাকতো তাহলে কোন খাবার আমার চিবিয়ে খেতে পারতাম না। শক্ত খাবারকে যদি না চিবিয়ে খায় তাহলে সেগুলো আমাদের পাকস্থলী হজম করতে পারবে না। শক্ত খাবারগুলো গলা দিয়ে নিচে নামতেও পারবেনা। খাদ্যের সাইজ যদি বড় হয় তাহলে সে খাবারগুলো খাদ্যনালীর মাঝখানে গিয়ে আটকে যেতে পারে। খাবার আটকে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে চলতে পারে না ফলে দম বন্ধ হয়ে যেকোনো সময় মানুষ মারা যেতে পারে।

দাঁত কেন ব্যথা করে

দাঁতকে অনেক সময় কর্তন এবং ছেদন মেশিনে বলা হয়। খাবার কে গ্রহণ উপযোগী করার জন্য দাঁত তার কাজ করে থাকে। অনেক সময় শক্ত কোন খাবারকে চিবানোর সময় দাঁত দাঁত আঘাত প্রাপ্ত হয়, নড়ে যায় মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হয় এবং অনেক সময় দাঁত ভেঙ্গেও যেতে পারে। এছাড়াও দাঁত কেন ব্যথা করে এটার বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন-

  • অসাবধানতা ভাবে ব্রাশ করলে দাঁতের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায়। দাঁতের নিচের দিকে মাংস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্ত পরে এবং দাঁত ব্যথা করে।
  • শক্ত কোন কিছু চাবালে বা ভাঙ্গার কারণে দাঁত ব্যথা করতে পারে।
  • দাঁত দিয়ে কোন সুতা টানলে বা অনেক সময় দাঁত দিয়ে সুতা কাটার কারণ ও দাঁত ব্যথা করে।
  • দাঁতে দাঁত ঘষা দিলে দাঁত ব্যথা হতে পারে।
  • ইট, লোহা, পাথর, কাঠ ইত্যাদিতে কামড়ানোর কারণও দাঁত ব্যথা হতে পারে।
  • দাঁতে পোকা লাগাও ব্যথার একটি কারণ হতে পারে। 
  • দাঁতের মধ্যে কোন কিছু আটকে থাকা। 
  • আক্কেল দাঁত বের হওয়ার সময় ব্যথা হতে পারে।
  • দাঁত নড়ে গেলে ব্যথা লাগে ইত্যাদি।
মূলত এসব কারণ ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলো কারণে দাঁত ব্যথা হতে পারে।

দাঁতে পোকা কেন লাগে

আমরা ছোট বেলাই অনেকেই দেখেছি যারা দাঁতের ব্যথায় কান্নাকাটি করে তাদের দাঁতের ভেতর থেকে পোকা বের করতে। আসলেই কি দাঁতে পোকা থাকে? আর থাকলেও এসব পোকা আসে কোথা থেকে। ছোট বাচ্চাদের দাঁতে পোকা বেশি লাগে। ছোট্ট শিশুরা মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশি খেতে ভালোবাসে। আর এ কারণে অনেক সময় দাঁতে পোকা লাগে। 


ছোট বড় সবাই এই দাঁতের ব্যথায় ভোগেন। আর সব মায়েদের কমন প্রশ্ন থাকে সেটা হল বাচ্চাদের দাঁত পোকায় খেয়ে ফেলেছে। এটা শুধুমাত্র শিশু না কোন বয়সে হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ফলে দাঁত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দাঁতের গোড়া নষ্ট হয়ে যায়। দাঁত নষ্ট হওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 


দাঁতে যখন ক্ষয় বা গর্ত হয়ে যায় তখন সেটাকে আমরা সাধারণত দাঁতের পোকা বলে থাকি। অবাক করার বিষয় হলো ডাক্তাররা দাঁতের কোন পোকা খুঁজে পাননি। তাহলে সবার একটা প্রশ্ন থেকে যায় যদি দাঁতে পোকা না থাকে তাহলে দাঁত নষ্ট হয় কিভাবে। চলুন এই উত্তরটা আজ জেনে নেওয়া যাক। মিষ্টি জাতীয় জিনিস আমাদের সকলের পছন্দ।

কিন্তু এই মিষ্টি জাতীয় খাওয়ার পরে যদি ভালোমতো কুলি বা মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার না করার কারণে আপনার দাঁত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মুখের ভিতরে এক ধরনের জীবাণু আছে যা মিষ্টি জাতীয় জিনিসের সংস্পর্শে আসলে এক ধরনের অ্যাসিড তৈরি করে। এই এসিড দাঁতের ওপর শক্ত আহরণকে ক্ষয় করে এবং পরে গর্তের সৃষ্টি করে এটার নাম হচ্ছে ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয়। 


এই ডেন্টাল ক্যারিজ শিশুদের দাঁত ক্ষয়ের বা দাঁতে পোকার প্রধান কারণ। অনেকে এই দাঁতের পোকা থেকে বাঁচতে কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ওষুধ গ্রহণ করে। এতে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। দাঁতের গর্ত থেকে পোকা অনেক সময় দাঁতের গোড়া, গোড়ার মাংস বা দাঁতের হাড়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 

এতে করে দাঁতে পুঁজ, দাঁতের মাড়ি ফুলে ওঠা, অনেক সময় মারি লাল হয়ে যায়। সিস্ট, সেলুলাইটিস সহ আরো অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। ভাঙ্গা দাঁতের অংশগুলো অনেক সময় চোয়াল এবং জিহব্বায় ঘা সৃষ্টি করে। একটু অযত্ন এবং অবহেলার কারণে অনেক সময় সব গুলো দাঁতে পোকা ছড়িয়ে যেতে পারে। এবং সবগুলো দাঁত পড়েও যেতে পারে।

দাঁত ভালো রাখার উপায়

ইতিমধ্যে আমরা দাঁতের পোকা লাগার বিষয়ে আলোচনা করলাম। এখন আমরা আলোচনা করব দাঁতে পোকা লাগার কারণ এবং দাঁত ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে-

দাঁতে পোকা লাগার কারণঃ 

  • দাঁতের ভিতরে পোকা আক্রমণ করার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। খাবার খাওয়ার ফলে দাঁতের ভিতরে গর্তে এবং ছোট ছোট খাদে খাবার আটকে যায়। সামনে যত সহজে দাঁত পরিষ্কার করা যায় ভেতরের দিকে সেভাবে দাঁত পরিষ্কার করা যায় না। 
  • বিশেষ কিছু খাবার যেমনঃ দুধ, মিষ্টি, আইসক্রিম, মধু, চিনি, কেক, বিস্কুট এগুলো অনেক বেশি সময় ধরে দাঁতে আটকে থাকে। যা দাঁতে পোকা লাগার মূল কারণ।
  • কোক, মিষ্টি জাতীয় পানীয় পান করলে দাঁতের গোরায় শির শির অনুভূত হয়। অনেক সময় যন্ত্রণা হতে পারে।
  • ঘুমানোর সময় শিশুকে দুধ পান করালে সেটা মুখের ভেতরে লেগে থাকে। এতে পোকা লাগার সম্ভাবনা আরও বেশি বেড়ে যায়।
  • ভালোভাবে এবং নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতে পোকা লাগে।
  • অনেক সময় পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি হলে পাকস্থলীর নির্যাস মুখে চলে আসে এবং দাঁতের ক্ষয় বেড়ে যায়।
  • খাবার খাওয়ার পরে ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার বা বেশি পানি পান না করলে দাঁতের ভিতরে খাবার গুলো চলে যেতে পারে না। আবার অনেক সময় মুখ শুকিয়ে গেলে তখনও খাবার ধুয়ে যেতে পারে না। এরকম হলে সমস্যা বাড়তে থাকে। 
দাঁত যেভাবে ভালো রাখবেন
  • নিয়মিত সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
  • অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে এবং খেলেও ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
  • দাঁতের ফাঁকের মধ্যে খাবার আটকে যায় এরকম খাওয়ার কম খেতে হবে।
  • অনেক সময় দাঁতের চারপাশে হলুদের মত বর্ণ ধারণ করে এবং শক্ত পাথর হয়ে যায়। দাঁত যদি এরূপ হয়ে থাকে তাহলে পরিষ্কার করার জন্য ডেন্টিস্টের এর কাছে যেতে হবে।
  • দাঁত ব্রাশ করার শেষে মুখের  জীবাণু দূর করার জন্য প্রয়োজনে অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলি করতে হবে।

 দাঁতের পোকা লাগলে কি কি অসুবিধা হয়

দাঁতে পোকা লাগলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়, মুখ ফুলে ওঠে। অনেকে মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারে না, কথা বলতে পারে না, কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। ছোট বাচ্চারা সবচাইতে বেশি কষ্ট পাই। দাঁতে ব্যাথার কারনে ঠিকমতো না খেলে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এতে দাঁতের ব্যথা সাথে সাথে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা ও দেখা দিতে পারে। ব্যথার কারণে অনেকে কাতর হয়ে পড়ে। আক্কেল দাঁত বের হওয়ার সময় ও তাদের প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়।

দাঁতের ব্যথা থেকে বাঁচার সহজ উপায়

সামান্য একটু ব্যথার কারণে আমরা ডাক্তারের কাছে না গিয়েও কিছু ঘরোয়া ভাবে পদ্ধতি অবলম্বন করে
এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এখন আমরা আলোচনা করব দাঁতের ব্যথা থেকে বাঁচার সহজ উপায়। অনেক সময় ঘরোয়া ভাবে বিশেষ কিছু পদ্ধতি বা চিকিৎসা গ্রহণ করলে দাঁতের ব্যাথা অনেকখানি কমে যায়।

লবণঃ দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য যতগুলো উপায় রয়েছে তার মধ্যে লবণ অন্যতম কার্যকরী উপাদান
পানির মধ্যে অল্প পরিমাণ লবণ দিয়ে পানি হালকা কুসুম কুসুম গরম করে গড়গড়া সহ কুলি করলে দাঁতের ব্যথা অনেকটা কমে যায়।

লবঙ্গঃ ব্যথাযুক্ত দাঁতের উপর একটা লবঙ্গ রেখে দিতে হবে। চিবানোর দরকার নেই। আবার তাড়াতাড়ি ফেলেও দিবেন না। যতক্ষণ না ব্যথা কমে ততক্ষণ এটি রেখে দিন। পারলে কয়েক ফোটা লবঙ্গের তেল দিয়ে দাঁত মেসেজ করুন তাহলে ব্যথা কমবে।

তুলসি পাতাঃ তুলসি পাতা হাতের তালুতে নিয়ে নরম করে মেসেজ করুন। এরপর ব্যথা যুক্ত দাঁতের উপর রেখে দিন বা চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। দেখবেন ব্যথা অনেক কমে গেছে।

পেঁয়াজঃ পেঁয়াজে এক ধরনের অ্যান্টিসেপটি, এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিমাইক্রোরিয়াল উপাদান আছে। যা জীবানু ধ্বংস করা সহ ব্যথা কমায়। পেঁয়াজ যদি চিবিয়ে খেতে ভালো না লাগে সে ক্ষেত্রে ব্যাথাযুক্ত দাঁতের উপর অল্প পরিমাণ কোয়া রেখে দিন। দিনে ২-৩ বার এভাবে পেঁয়াজ রাখলে ব্যথা কমে যায়।

রসুনঃ রসুন যেমন উপকারী তেমনি দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। যদি রসুন চিবিয়ে খেতে না পারেন তাহলে এক কোয়া রসুন ব্যথাযুক্ত দাঁতের উপর রেখে দিন। দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।

পেয়ারা পাতাঃ পেয়ারা পাতা ব্যথাযুক্ত স্থানে রেখে দিলে ব্যথা কমে যায়।

যদি ব্যথা তীব্র হয়, এসব ঘরোয়া চিকিৎসা ভালো না হয় তাহলে অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।

পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url