ছাগল পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ছাগল একটি গৃহপালিত পশু। অনেকের কাছে ছাগল পালন শখের, আবার অনেকে বাড়তি কিছু টাকা উপার্জনের জন্য ছাগল পালন করেন। যে যেই ভাবে ছাগল পালন করুক না কেন সবার লক্ষ্য থাকে ছাগল পালন করে কিভাবে আয় করা যায়।
কোন উপায়ে এবং কিভাবে ছাগল পালন করলে ভাল ইনকাম করতে পারবেন আজ আমরা সে সকল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সামনে তুলা ধরব। তার আগে ছাগল পালন সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে এই পোস্টটি ভালভাবে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
ছাগলের জাত নির্বাচন পদ্ধতি
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩০০টি মত ছাগলের জাত রয়েছে। একেক জাতের ছাগল একেক রকম বৈশিষ্ট্যের হয়। ছাগল পালন একটি জনপ্রিয় প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে বেশ কয়েটি ছাগলের জাত রয়েছে, তার মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রামছাগল বা যমুনাপারি ছাগল, বিটল ছাগল, বোয়ার ছাগল, বারবারি ছাগল বিশেষভাবে পরিচিত। এদের মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বেশি পরিচিত।
এছাড়াও বর্তমানে অধিক মাংস এবং দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে দেশীও ছাগলের পাশাপাশি খামারীরা বেশ কয়েকটি বিদেশি জাতের ছাগল লালন পালন শুরু করেছে। বিদেশী জাতের ছাগলের মাংস উৎপাদন বেশি হয় এবং সহজে কম সময়ে বেশি লাভ করা যায়। বাজারে ছাগলের মাংসের ব্যাপক চাহিদা হয়েছে।বাংলাদেশের এখনো সেরকম ভাবে ছাগল লালন পালন প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ছাগলের সরবরাহের গ্রাম থেকে। গ্রামের মানুষেরা খুব কম সময় এবং স্বল্প পুঁজিতে ছাগল লালন প্রক্রিয়াকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল খুব বেশি জনপ্রিয়। এছাড়াও রাম ছাগল, বিটল ছাগলসহ বেশ কয়েকটি ছাগল রয়েছে যেগুলো খুব দ্রুত বাচ্চা প্রসব করতে পারে, এবং দুধও দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছাগল বাচ্চা উৎপাদন এবং মাংসের জন্য লালন পালন করা হয়।
ছাগলকে কিভাবে খাবার সরবরাহ করার হয়
ছাগল একটি তৃণভোজী প্রাণী। এরা বেশিরভাগ সময় চরণ ভূমিতে মুক্তভাবে চড়ে বেড়ায় এবং ঘাস লতাপাতা অর্থাৎ আঁশ জাতীয় খাদ্য এরা বেশি খেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাহির থেকে খুব একটা বেশি খাদ্য সংগ্রহ করতে হয় না। বর্তমানে মুক্ত পদ্ধতিতে চরণ ভূমিতে ছাগল বেশি লালন-পালন করা হয়। এবং এটি হল একটি জনপ্রিয় এবং সহজ মাধ্যম। এতে ঝামেলা কম হয়।
সবুজ ঘাস হিসেবে আম পাতা, কাঁঠাল পাতা, ইপিল ইপিল পাতা, কলাপাতা, বট পাতা সহ আরো অনেক ধরনের পাতা রয়েছে যেগুলো বনে জঙ্গলে পাওয়া যায় এবং ছাগলকে সরবরাহ করা হয়। তাছাড়াও খেসারি, মাসকলাই, দুর্বাঘাস, বাকশা ঘাস খাওয়ানো হয়। চাষ করা ঘাসের মধ্যে উন্নত মানের পারা, জার্মান, নেপিয়ার ইত্যাদি ঘাস ছাগলে পুষ্টি অনুসারে সরবরাহ করা যেতে পারে।
ছাগল বেশিরভাগ সময়ে তাজা ঘাস লতা পাতা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। ছাগলের পুষ্টিচাহিদা মেটানোর জন্য সবুজ ঘাসের সাথে দৈনিক চাহিদা মত বাহির থেকে বেশ কিছু সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। যেমনঃ দানাদার খাদ্যের তালিকায় গম, ভুট্টা, গমের ভুসি, চালের গুঁড়া, বিভিন্ন ধরনের ডালের খোসা, খৈল, শুটকি মাছের গুড়া ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। যেন এতে ছাগলের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টিগুণ দুটোই খুব ভালো থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ অবশ্যই করতে হবে। পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানির সাথে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। অনেক সময় পানির পরিবর্তে ভাতের মাড় ও খাওয়ানো যেতে পারে। ভাতের মাড়ে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। ছাগল যেহেতু ছয় মাস পরপর বাচ্চা দেয় সেজন্য তার স্বাস্থ্যের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এবং সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে ছাগল পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।
ছাগলের জন্য উপযুক্ত ঘর তৈরির উপায়
ছাগলের জাত নির্বাচন এবং খাবার সরবারাহের সাথে সাথে ছাগলের বাসস্থানের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। ছাগলের জন্য শুষ্ক, আলো-বাতাস পূর্ণ, খোলামেলা উচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে। বাসস্থানের জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ময়লা, স্যাঁতস্যাঁতে এরূপ জায়গায় পরিহার করতে হবে। নির্ধারিত স্থান যদি ময়লা বা নোংরা হয় তাহলে সেটা পরিষ্কার করতে হবে।
জায়গা যদি স্যাঁতস্যাঁতে বা ভিজে হয় তাহলে কাঠ বা বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করতে হবে। মাচা অবশ্যই শক্ত এবং মজবুত হতে হবে যেন ছাগলের ভারে হেলে বা ভেঙ্গে না পড়ে। প্রতিটি ছাগলের জন্য নির্ধারিত জায়গা রাখতে হবে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের জন্য ১ বর্গমিটার ( ১০ ফুট) জায়গা প্রয়োজন হয়।
আবার ক্ষতিকর পশু পাখি দ্বারা যেন ছাগলের ক্ষতি না হয় এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে কুকুর এবং শিয়াল ছাগলের ক্ষতি করে থাকে। ছাগলের জন্য অর্ধ আবদ্ধ এবং আবদ্ধ এই দুই পদ্ধতিতে ঘর তৈরি করা হয়। উভয় ঘর তৈরি ক্ষেত্রে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। বর্ষা মৌসুমে বেশিরভাগ সময় ছাগলকে বন্দি অবস্থায় বা ঘরের মধ্যে থাকতে হয়।
ছাগল পালনে কিভাবে লাখপতি হওয়া যায়
ছাগল পালনে বেশি পুঁজি দরকার হয় না। পারিবারিকভাবে ছাগল পালন করতে চাইলে ২-৩ টা দিয়ে শুরু করা যায়। ছাগলকে বাইরে থেকে খুব বেশি খাবার কিনে খাওয়াতে হয় না। এতে অনেকটা টাকা সাশ্রয় হয়। ছাগল ঘুরে ঘুরে খেতে ভালোবাসে। গ্রামাঞ্চলে মাঠে-ঘাটে, বিলে, বনে, জঙ্গল সব জায়গায় ছাগল ঘুরে ঘুরে চরে খায়। অনেক সময় দড়িতে বেঁধে রেখে খাওয়ানো যায় আবার মুক্তভাবে চড়ানো যায়।
অর্থাৎ ছাগলের খাবারের জন্য বাড়তি কোন টাকা গুনতে হয় না। ছাগল বছরে ২ বার বাচ্চা দেয়।এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২-৩টি আবার কখনো একসাথে ৪টি ও বাচ্চা দেয়। এবং সে সাথে দুধও দেয়। বাচ্চাগুলো খুব দ্রুত বড় হয়। পুরুষ ছাগল (১৫-৩০) কেজির মতো এবং মাদি (নারী) ছাগলের ওজন (১৫-২৫) কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলে উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগলের উচ্চতা, বয়স এবং স্বাস্থ্য ভেদে ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ২০ হাজার, ৩০ হাজার, ৫০ হাজার এমনকি তারও বেশি হয়ে থাকে। মাদী ( নারী ) ছাগল তুলনামূলক পুরুষ ছাগলের চাইতে কম দামে হয়ে থাকে।
একটি ছাগল যদি বছরে ৪-৮টি বাচ্চা দিয়ে থাকে, আর সেসব ছাগল যদি গড়ে (৩০-৪০) হাজার টাকায় বিক্রি করা যায় তাহলে বছরে আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন একবার ভেবে দেখুন তো!!! তাহলে সেখান থেকে প্রচুর টাকা লাভ করা সম্ভব । আকারে ছোট হওয়ায় অল্প জায়গায় একসাথে অনেকগুলো ছাগল লালন পালন করা যায়।
ছাগল লালন-পালনে খুব বেশি কষ্ট, পরিশ্রম বা বেগ পোহাতে হয় না। ছাগলের চামড়া বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ছাগল পালনে খুব অল্প সময়ে স্বল্প পরিসরে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায়।
ছাগলের রোগবালাই এবং এর প্রতিকার যেভাবে করবেন
ছাগল পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে রোগ। যদি ছাগল রোগে আক্রান্ত হয় আর যদি সেই রোগটা ধরতে না পারা যায় তাহলে ছাগলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমনকি ছাগল মৃত্যুবরণ করতে পারে। কাজেই ছাগলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ভাবে নজর রাখতে হবে। যেসব রোগে ছাগল আক্রান্ত হয় সেগুলোর তালিকা তুলে তুলে ধরা হলো।
পিপিআরঃ
লক্ষনঃ
- ঝিম মেরে পিঠ বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকে।
- শরীরের তাপমাত্রা অধিক বেরে যায়।
- গাড় বাদামী পাতলা পায়খানা করে। সাথে রক্ত মিশ্রিত আমাশয় হয়।
- শ্বাসকষ্ট, নিউমনিয়া, নাক, মুখ, চোখ দিয়ে তরল বের হয়।
চিকিৎসাঃ
- নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই।
- উন্নত এন্টিবায়োটিক দেওয়া।
- মুখে বা শিরাই পর্যাপ্ত স্যালাইন দেয়া।
লক্ষনঃ
- চোখ, কান, নাক, মুখ, পুরো শরীর, পা, বাট, পায়ু পথ সব জায়গায় গুটি বসন্ত দের হয়।
চিকিৎসাঃ
- মৃত্যুহার কমানোর জন্য প্রাথমিকভাবে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে।
- আক্রান্ত প্রাণীকে অন্য সকল সুস্থ প্রাণীর কাছে থেকে আলাদা করতে হবে।
- নিয়ম চিকিৎসা করলে এ রোগ ভালো হয়। কিন্তু শরীলের দাগ থেকে যায়।
লক্ষনঃ
- শরীরে জ্বর হয়, লালা পরে এবং ছাগল খুড়িয়ে হাঁটতে থাকে।
- মুখ এবং পায়ে দুই মাঝে ফোসকা পরে এবং তার গলে এক পর্যায়ে ঘা হয়ে যায়।
চিকিৎসাঃ
- গরম পানিতে ফিটকিরি, পটাশিয়াম
- পারম্যাঙ্গানেট, সোডা গুলে মুখ ও পায়ে গা ধুয়ে দিতে হবে
- ঘা তাড়াতাড়ি শুকাতে সালফানিলামাইড পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
একথাইমাঃ
লক্ষনঃ
- প্রথমে ঠোঁটে কিনারে ঘা হয় পরে ঘা ঠোটের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
- দুই খুরের মাঝখানে ঘা হয় এবং ছাগল খোড়ায়।
- মুখের ভিতরে এবং চোয়ালে ফুলকপির মত টিউমার হয়।
চিকিৎসাঃ
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ফিটকারী দিয়ে ঘা ভালমতো ধুয়ে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে
- আক্রান্ত জায়গায় প্রতিদিন একবার মিথাইল ব্ল/ কৃস্টাল ভায়োলেট বা ভায়োডিন ব্যবহার করলে তারাতাড়ি ভাল হয়ে যায়।
বর্ডার ডিজিসঃ
লক্ষনঃ
- কম ওজনের বাচ্চা প্রসব করে অনেক সময় গর্ভে বাচ্চা মারা যায়।
- বাচ্চার অঙ্গ বিকৃতি হয়।
- বাচ্চার গায়ে বাদামী বা কাল রঙের বড় বড় পশম হয়।
লক্ষনঃ
- এ রোগের তীব্রতা অনেক বেশি। মাটিতে পরে খিচুনি দিতে দিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়।
- পা ছোড়াছড়ি করে এবং পায়খানার রাস্তায় প্যারালাইসিস হয়।
- প্রচণ্ড ডাইরিয়া হয় এবং শরীর ধীরে ধীরে শুকায় যায়।
চিকিৎসাঃ
- অ্যান্টিসিরাম দিতে হবে।
- এন্টিবায়োটিক বা ব্যাথার ইনজেকশন দিতে হবে।
- সিরাম স্যালাইন দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে স্যালাইন দেওয়া যাবে না।
তড়কাঃ
লক্ষনঃ
- এ রোগের তীব্রতা আর অনেক বেশি। উপসর্গ প্রকাশের আগেই ছাগল মারা যায়। জ্বর, খিচুনি ও শ্বাসকষ্ট হয়। মারা যাওয়া ছাগলের বিভিন্ন স্থান দিয়ে কালচে রক্ত বের হয়।
- জ্বর, শ্বাস প্রশ্বাস এ সমস্যা, ক্ষুধা কমে যায়, শরীর নিস্তেজ হয়ে পরা, রক্ত মিশ্রিত পায়খানা হয় আবার গর্ভপাত ও হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
- অ্যান্টিসিরাম দিতে হবে।
- এন্টিবায়োটিক দিতে হবে।
ধনুষ্টংকারঃ
লক্ষনঃ
- মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এবং ২ চোয়ালের দাঁতের একে অপরের সাথে লেগে যায়।
- কান শক্ত এবং খাড়া হয়ে যায়। প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়।
- ভয় বা চমকে উঠার ও অভ্যাস হয়ে যায়।
- প্রথম দিকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও পরে বেরে যায়।
চিকিৎসাঃ
- টিটিনাস এন্টিটক্সিন ও সহায়ক চিকিৎসা দিতে হবে।
- অপারেনরে পূর্বে টিটেনাস টক্সায়েড দিতে হবে।
নিউমোনিয়াঃ
লক্ষনঃ
- ক্লান্ত হয়ে যায়, ক্ষুধা কমে যায় এবং জ্বর আসে।
- নিঃশ্বাসে নিলে ঘড় ঘড় শব্দ হয়, শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার সময় কষ্ট হয়।
- মাঝে মাঝে কাশি হয়। এবং হঠাৎ মারা যায়।
চিকিৎসাঃ
- এন্টিবায়োটিক বা সালফনামাইড ব্যবহার করতে হবে।
- এন্টিভিটামিন দিতে হবে।
ফুট রটঃ
লক্ষনঃ
- খুরের চারিদিকে এবং ২ খুরের মাঝখানে লাল হয়ে ফুলে যায়।
- ক্ষত জায়গায় দুর্গন্ধ ও পুঁজ হয়।
- ধীরে ধীরে হাড়ের জয়েন্টগুলোতে ছড়িয়ে পরে। এবং ছাগল খোঁড়ায়।
- তাপমাত্রা বারে যায়।
চিকিৎসাঃ
- ছাগলকে সপ্তাহে ১-২ বার করে কয়েক সপ্তাহ; ১০% জিঙ্ক সালফেট বা কপার সালফেট সল্যুশন দিয়ে তৈরি করা ফুট বাথে হাটাতে হবে।
- এন্টিবায়োটিক। যেমন: পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন বা টেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করা।
সালমোনেলোসিসঃ
লক্ষনঃ
- প্রথমে জ্বর, পরে রক্ত-মিউকাস ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া হয়।
- জ্বর ১০৪°-১০৭° ফা: হতে পারে ও গর্ভপাত হতে পারে।
- ক্ষুধামন্দা, অবিরাম ডায়রিয়া ও ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
- এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
- সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ডায়রিয়া বন্ধে এস্ট্রিনজেস্ট এবং ডিহাইড্রেশন রোধে জ্বরবিহীন অবস্থায় ডেক্সট্রোজ স্যালাইন দিতে হবে।
গিড রোগঃ
লক্ষনঃ
- মাথা ঘোরাতে থাকে এবং মাথা একদিকে কাত করে রাখে।
- মাঝে মাঝে খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে চিৎকার করতে থাকে।
- অন্ধ ও অবশ হয়ে যেতে পারে।
- আক্রান্ত ছাগল দিন দিন শুকাতে থাকে।
- মাথার উপরের হাড় পাতলা ও নরম হয়ে যায়, যা চাপ দিঢে অনুভব করা যায়।
চিকিৎসাঃ
- এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তবে অপারেশন করে মস্তিস্ক তেকে সিস্ট বের করে আনলে ছাগল সুস্থ হয়।
খোঁশ পাঁচড়া রোগঃ
লক্ষনঃ
- আক্রান্ত স্থানে চুল পড়ে যায়। সেখানে শুস্ক বা ভেজা ক্ষত হয়।
- চামড়া মোটা ও খসখসে হয়ে যায়।
- চুলকানির কারনে ছাগল আক্রান্ত স্থান শক্ত জায়গায় ঘসে, ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসাঃ
- আইভারমেকটিন বা ভারমিক এনজেকশন দিতে হবে (প্রতি ৫০ কেজির জন্য ১ মিলি, চামড়ার নিচে)
- প্রতি মাসে একবার পরজীবীনাশক ওষুধ ম্যালাথিয়ন (০.১-০.২%) বা ডায়াজিনন (০.১-০.২%) দিয়ে গোসল করাতে হবে।
এছাড়া ছাগল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ কোন পশু হাসপাতালে কিংবা পশু ডাক্তারকে দেখাতে হবে। আক্রান্ত ছাগলটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আলাদাভাবে রেখে নিবিড় পরিচর্যার করতে হবে। কোনভাবেই অসুস্থ ছাগলকে সুস্থ কোন ছাগলের সঙ্গে রাখা যাবে না। এতে অসুস্থ ছাগলের সংস্পর্শে সুস্থ ছাগল ও অসুস্থ হতে পারে।
ছাগলের বাসস্থান সবসময়ের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছাগলের মূত্র এবং বর্জ্য অনেক দুর্গন্ধ ছড়ায়। প্রতিদিনের বর্জ্য প্রতিদিন তুলে ফেলতে হবে। অনেক সময় বর্জ্য থেকেও রোগ ছড়ায়। কাজেই ছাগল পালনের ক্ষেত্রে সঠিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।
ছাগল পালনে সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো কি কি
ছাগল পালন একটা লাভজনক প্রক্রিয়া হলেও অনেকেই ছাগল পালন করতে চাই না। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে ছাগল পালন। অনেক হত দরিদ্র পরিবার আছে যারা ছাগল পালন থেকে নিজেদের আর্থিক অবস্থা উন্নতি করেছে। স্বল্প মূলধনে ছাগল লালন পালন শুরু করা যায়।
বর্তমানে যুবসমাজ এবং বেকার যুবকরা ছাগল পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ও বিদেশে মাংস সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে এই ছাগল পালনের মাধ্যমে।
সুবিধাঃ
- ছোট প্রাণী হিসেবে কম জায়গায় প্রয়োজন হয়।
- ছোট প্রাণী হিসেবেও খাবার খরচ তুলনামূলক অনেক কম এবং সহজলভ্য।
- বছরে ২বার ৪-৮টি বাচ্চা পাওয়া যায়।
- অন্যান্য পশু পাখির তুলনায় ছাগলের রোগবালাই কম হয়।
- দেশে বিদেশে ব্ল্যাক ছাগলের চামড়া, মাংস ও দুধের চাহিদার ব্যাপক হয়েছ।
- ছাগল ভূমিহীন ক্ষুদ্র ও গরিব চাষীদের আয়ের একটি অন্যতম উৎস।
- ছাগল তার পছন্দ মত খাবার খায় এজন্য ঘাস লতাপাতা বা অন্যান্য কোন খাবার সংগ্রহের ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে ছাগলে পছন্দের বিষয়টা মাথায় রেখে তারপর খাবার নির্বাচন করতে হয় বা খাবার দিতে হয়।
- ছাগলের মল মূত্রে প্রচুর পরিমাণ দুর্গন্ধ ছড়ায় এজন্য পরিষ্কার করার পাশাপাশি যদি সম্ভব হয় তাহলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। যা অনেকটা বিরক্তিকর এবং কষ্টসাধ্য।
- বর্ষা মৌসুমে ছাগলের জন্য সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। তখন বাহিরে ঘাস খাওয়ানোর কোন সুযোগ থাকে না। তখন তাদেরকে আলাদাভাবে খাবার সরবরাহ করতে হয়।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের এই পোস্টটি পরে যদি আপনার কাছে ভাল লাগে বা একটু হলেও আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন। আপনার শেয়ার করা এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই আর দেরি না করে সবার সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
পোস্টটি পরে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে বা কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url